পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>२३ বিভূতি-রচনাবলী মানুষের হস্তরোপিত গদাফুলের ও সন্ধ্যামণি ফুলের গাছ। সামনে আর একখানা বড় পাথর, তাতেও সিঁদুর মাথা। বহুকাল হইতে নাকি এই দেবস্থান এখানে প্রতিষ্ঠিত, রাজবংশের ইনি কুলদেবতা। পূৰ্ব্বে এখানে নরবলি হইত-সম্মুখের বড় পাথরখানিই যুপ-রূপে ব্যবহৃত হইত। এখন পায়রা ও মুরগী বলি প্রদত্ত হয়। জিজ্ঞাসা করিলাম—কি ঠাকুর ইনি ? রাজা দেবিরু বলিলেন—টীড়বারো, বুনো মহিষের দেবতা। মনে পড়িল গত শীতকালে গনু মহাতের মুখে শোনা সেই গল্প। রাজা দেবের বলিলেন—টীড়বারো বড় জাগ্রত দেবতা। তিনি না-থাকলে শিকারীরা চামড়া আর শিঙের লোভে বুনো মহিষের বংশ নিৰ্ব্বংশ করে ছেড়ে দিত। উনি রক্ষা করেন। ফদে পড়বার মুখে তিনি মহিষের দলের সামনে দাড়িয়ে হাত তুলে বাধা দেন–কত লোক দেখেছে। এই অরণ্যাচারী আদিম সমাজের দেবতাকে সভ্য জগতে কেউই মানে না)।ানেও नiকিন্তু ইহা যে কল্পনা নয়, এবং এই দেবতা যে সত্যই আছেন—তাহ স্বতঃই মনে উদয় হইয়াছিল সেই বিজন বন্যজন্তু-অধুষিত অরণ্য ও পৰ্ব্বত অঞ্চলের নিবিড সৌন্দৰ্য্য ও রহস্তের মধ্যে বসিয়া । অনেক দিন পরে কলিকাতায় ফিরিয়া একবার দেখিয়াছিলাম বড়বাজারে, জ্যৈষ্ঠ মাসের ভীষণ গরমের দিনে, এক পশ্চিমা গাডোয়ান বিপুল বোঝাই গাভীর মহিষ দুটাকে প্রাণপণে চামড়ার পাচন দিয়া নিৰ্ম্মম ভাবে মারিতেছে—সেই দিন মনে হইয়াছিল, হায় দেব টীড়বারে, এ তো ছোট-নাগপুর কি মধ্যপ্রদেশের অরণ্যভূমি নয়, এখানে তোমার দয়ালু হস্ত এই নিৰ্য্যাতিত পশুকে কি করিয়া রক্ষা করিবে ? এ বিংশ শতাব্দীর আর্যসভ্যতাদৃপ্ত কলিকাতা। এখানে বিজিত আদিম রাজা দেবিরু পান্নার মতই তুমি অসহায়। আমি নওয়াদা হইতে মোটর বাস ধরিয়া গয়ায় আসিব বলিয়া সন্ধ্যার পরেই রওনা হইলাম। বনোয়ারী আমাদের ঘোড়া লইয়া তাবুতে ফিরিল। আসিবার সময় আর একবার রাজকুমারী ভানুমতীর সহিত দেখা হইয়াছিল। সে এক বাটি মহিষের দুধ লইয়া আমাদের জন্ত দাড়াইয়া ছিল রাজবাড়ীর দ্বারে।