পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ミや বিভূতি-রচনাবলী হইয়াছে ওর সঙ্গীহার প্রৌঢ় প্রাণ। এই ঘন জঙ্গলে এক বাস করিয়া সে ক্লাস্ত হইয়া পড়িয়াছে । এখন যাহার কথা ভাবিতে তাহার ভাল লাগে, যাহার সাহচর্য্যের জন্ত তার মন উন্মুখ–সে হইল বহু কালের সেই বালিকা সরযু, পৃথিবীতে যে কোথাও আর নাই। বেশ লাগিতেছিল ওর গল্প। আগ্রহের সঙ্গে বলিলাম, তার পর ? —তার পর ফেরবার পথে দেখা হল । ও একটু পিছিয়ে পড়ল দলের থেকে। আমি বললাম—সরযু, আমি বড় কষ্ট পাচ্ছি, তোমার সঙ্গে দেখাশোনাও বন্ধ, আমার লেখাপড়া হবে না জানি, কেন মিছে কষ্ট পাই, ভাবছি টোল ছেডে চলে যাব এ মাসের শেষেই । সরযু কেঁদে ফেললে। বললে—বাবাকে বলে না কেন ? সরযুর কান্না দেখে আমি মরীয়া হয়ে উঠলাম। এমনি হয়ত যে কথা কখনও আমার অধ্যাপককে বলতে পারতাম না, তাই বলে ফেললাম একদিন । বিয়ে হওয়ার কোন বাধা ছিল না, স্বজাতি, স্বঘর। বিয়ে হয়েও গেল । খুব সহজ ও সাধারণ রোমান্স হয়ত—হয়ত শহরের কোলাহলে বসিয়া শুনিলে এটাকে নিতান্ত ঘরোয় গ্রাম্য বৈবাহিক ব্যাপার, সামান্ত একটু পুতুপুতু ধরনের পূর্বরাগ বলিয়া উড়াইয়া দিতাম । ওখানে ইহার অভিনবত্ব ও সৌন্দর্ঘ্যে মন মুগ্ধ হইল। দুইটি নরনারী কি করিয়া পরস্পরকে লাভ করিয়াছিল তাহদের জীবনে, এ-ইতিহাস যে কতখানি রহস্যময়, তাহা বুঝিয়াছিলাম সেদিন। চা-পান শেষ করিতে সন্ধ্যা উত্তীণ হইয়া আকাশে পাতলা জ্যোৎস্না ফুটিল। ষষ্ঠ কি সপ্তমী তিথি । আমি বন্দুক লইয়া বলিলাম—চল রাজু, দেখি তোমার ক্ষেতে কোথায় শূওর। একটা বড় তুতগাছ ক্ষেতের এক পাশে। রাজু বলিল—এই গাছের ওপর উঠতে হবে হুজুর। আজ সকালে একটা মাচা বেঁধেছি ওর একটা দো-ডালায় । আমি দেখিলাম, বিষম মুশকিল। গাছে ওঠা অনেক দিন অভ্যাস নাই। তার উপর এই রাত্রিকালে। কিন্তু রাজু উৎসাহ দিয়া বলিল—কোন কষ্ট নেই হুজুর। বাশ দেওয়া আছে, নীচেই ভালপালা খুব সহজ ওঠা । রাজু হাতে বন্দুক দিয়া ডালে উঠিয়া মাচায় বসিলাম। রাজু অবলীলাক্রমে আমার পিছু পিছু উঠিল। দুজনে জমির দিকে দৃষ্টি রাখিয়া মাচার উপর বসিয়া রহিলাম পাশাপাশি । জ্যোৎস্না আরও ফুটিল। তুতগাছের দেী-ডালা হইতে জ্যোৎস্নালোকে কিন্তু স্পষ্ট কিছু অস্পষ্ট জঙ্গলে শীর্ষদেশ ভারি অদ্ভুত ভাব মনে আনিতেছিল। ইহাও জীবনের এক নূতন অভিজ্ঞতা বটে। একটু পরে চারিপাশের জঙ্গলে শিয়ালের পাল ডাকিয়া উঠিল। সঙ্গে সঙ্গে একটা কালোমত কি জানোয়ার দক্ষিণ দিকের ঘন জঙ্গলের ভিতর হইতে বাহির হইয়া রাজুর ক্ষেতে ঢুকিল। রাজু বলিল—ঐ দেখুন হুজুর— আমি বন্দুক বাগাইয়া ধরিলাম, কিন্তু আরও কাছে আসিলে জ্যোৎস্নালোকে দেখা গেল