পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ››ፃ সেটা শূকর নয়, একটা নীলগাই । নীলগাই মারিবার প্রবৃত্তি হইল না, রাজু মুখে দূর দূর বলিতে সেটা ক্ষিপ্ৰপদে জঙ্গলের দিকে চলিয়া গেল। আমি একটা ফাক আওয়াজ করিলাম । ঘণ্টা দুই কাটিয়া গেল। দক্ষিণ দিকের সে জঙ্গলটার মধ্যে বনমোরগ ভাকিয়া উঠিল। ভাবিয়ছিলাম দাঁতওয়াল ধাড়ী শূওরটা মারিব, কিন্তু একটা ক্ষুদ্র শূকর-শাবকেরও টিকি দেখা গেল না। নীলগাইয়ের পিছনে ফাক আওয়াজ করা অত্যন্ত ভূল হইয়াছে। রাজু বলিল—নেমে চলুন হুজুর, আপনার আবার ভোজনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি বলিলাম—কিসের ভোজন ? আমি কাছারিতে যাব--রাত এখনও দশটা বাজে নি—থাকবার জো নেই। সকালে কাল সার্ভে ক্যাম্পে কাজ দেখতে বেরুতে হবে। —খেয়ে যান হুজুর। –এর পর আর নাঢ়া-বইহারের জঙ্গল দিয়ে এক যাওয়া ঠিক হবে না, এখনই যাই। তুমি কিছু মনে করে না । ঘোড়ায় উঠিবার সময় বলিলাম—মাঝে মাঝে তোমার এখানে চা খেতে যদি আসি বিরক্ত হবে না তো ? রাজু বলিল—কি যে বলেন ! এই জঙ্গলে একা থাকি, গরীব মানুষ, আমার ভালবাসেন তাই চা চিনি এনে তৈরি করিয়ে একসঙ্গে খান। ও কথা বলে আমার লজ্জা দেবেন না বাবুজী ? :t সে সময়ে রাজুকে দেখিয়া মনে হইল রাজু এই বয়সেই বেশ দেখিতে, যৌবনে যে সে খুবই সুপুরুষ ছিল, অধ্যাপক-কন্যা সরযু পিতার তরুণ সুন্দর ছাত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হইয়া নিজের সুরুচিরই পরিচয় দিয়াছিল। রাত্রি গভীর। এক প্রাস্তর বাছিয়া আসিতেছি । জ্যোৎস্না অস্ত গিয়াছে। কোন দিকে আলো দেখা যায় না, এক অদ্ভুত নিস্তৰঙ্গ—এ যেন পৃথিবী হইতে জনহীন কোন অজানা গ্রহলোকে নির্বাসিত হইয়াছি—দিগন্তরেখায় জলজলে বৃশ্চিকরাশি উদিত হইতেছে, মাথার উপরে অন্ধকার আকাশে অগণিত দু্যতিলোক, নিম্নে লবটুলিয়া বইহারের নিস্তব্ধ অরণ্য, ক্ষীণ নক্ষত্রালোকে পাতলা অন্ধকারে বনবাউয়ের শীর্ষ দেখা যাইতেছে—দূরে কোথায় শিয়ালের দল প্রহর ঘোষণা করিল—আরও দূরে মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের সীমারেখা অন্ধকারে দীর্ঘ কালো পাহাড়ের মত দেখাইতেছে—অন্ত কোন শব্দ নাই কেবল এক ধরনের পতঙ্গের একঘেয়ে একটানা কি-বৃত্বাবু শব্দ ছাড়া ; কান পাতিয়া ভাল করিয়া শুনিলে ও শব্দের সঙ্গে মিশনে আরও দু-তিনটি পতঙ্গের আওয়াজ শোনা যাইবে। কি অদ্ভুত রোমান্স এই মুক্ত জীবনে, প্রকৃতির সহিত ঘনিষ্ঠ নিবিড় পরিচরে সে কি আনন্ম! সকলের উপর কি একটা অনির্দেশু, অব্যক্ত রহস্ত মাখানো—কি সে রহস্ত জানি না—কিন্তু বেশ জানি সেখান হইতে চলিয়া আসিবার পরে আর কখনও সে রহস্তের ভাব মনে আসে নাই। যেন এই নিস্তষ্ক, নির্জন রাত্রে দেবতারা নক্ষত্ররাজির মধ্যে স্বষ্টির কল্পনার বিভোর, যে