পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిy বিভূতি-রচনাবলী ૨ শ্রাবণ মাস। নবীন মেঘে ঢল নামিয়াছে অনেক দিন, নাচ ও লবটুলিয়া-বইহারে কিংবা গ্র্যান্ট সাহেবের বটতলায় দাডাইয়া চারিদিকে চাও, শুধুই দেখ সবুজের সমুদ্রের মত নবীন কচি কাশবন । একদিন রাজা দেবিরু পান্নার চিঠি পাইয়া শ্রাবণ-পূর্ণিমায় তার ওখানে ঝুলনোৎসবের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে চলিলাম। রাজু ও মটুকনাথ ছাডিল না, আমার সঙ্গে তাহারাও চলিল । হাটিয়া যাইবে বলিয়া উহার রওনা হইল আমার আগেই । বেলা দেড়টার সময় ডোঙাষ মিছি নদী পার হইলাম। দলের সকলের পর হইতে আডাইট বাজিয়া গেল। দলটিকে পিছনে ফেলিয়া তখন ঘোড ছুটাইয়া দিলাম। ঘন মেঘ করিয়া আসিল পশ্চিমে। তার পরেই নামিল ঝম্ ঝম্ বর্ষ। কি অপূৰ্ব্ব বর্ষার দৃপ্ত দেখিলাম সেই অরণ্য-প্রাস্তরে ! মেঘে মেঘে দিগন্তের শৈলমাল। নীল, থমকানো কালো বিদ্যুৎগভ মেঘে আকাশ ছাইয়া আছে, কচিৎ পথের পাশের খাল কি কেঁদ শাখায় মযুব পেখম মেলিয়া নৃত্যপবায়ণ, পাহাড়ী ঝরনার জলে গ্রাম্য বালক-বালিকা মহা উৎসাহে শাল-কাটির ও বহু বাঁশের খুনি পাতিয়া কুচে মাছ ধরিতেছে, ধূসর শিলাখণ্ড ভিজিয়া কালো দেখাইতেছে, তাহার উপব মহিষের রাখাল কচি শালপাতার লম্বা বিডি টানিতেছে। শাস্তস্তব্ধ দেশ-অরণ্যের পর অরণ্য, প্রান্তরের পর প্রান্তর, শুধুই ঝবন, পাহাড়ী গ্রাম, মকমছড়ানো রাঙা মাটির জমি, কচিৎ কোথfএ পুপিত কদম্ব বা পিয়াল বৃক্ষ। সন্ধ্যার পূর্বে আমি রাজা দোবক পান্নার রাজধানীতে পৌছিয়া গেলাম। সেবারকার সেই খড়ের ঘরখানা অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্ত চমৎকার করিয়া লেপিয়৷ পুছিয়া রাখা হইয়াছে। দেওয়ালে গিরিমাটির রং, পদ্ম গাছ ও মযুর আঁকা, শাল কাঠের খুটির গায়ে লতা ও ফুল জড়ানো । আমার বিছানা এখনও আসিয়া পৌছায় নাই, আমি ঘোডায় আগেই পৌছিয়ছিলাম—কিন্তু তাহাতে কোন অসুবিধা হইল না। ঘরে নূতন মাদুর পাতাই ছিল, গোট দুই ফসর্ণ তাকিয়াও দিয়া গেল। একটু পরে ভানুমতী একখানা বড় পিতলের সরাতে ফলমূল-কাটা ও একবাটি জাল-দেওয়া দুধ লইয়। ঘরে ঢুকিল, তাহার পিছু পিছু আসিল একখানা কাচা শালপাতায় গোটা পান, গোটা সুপারি ও অন্তান্ত পানের মসলা সাজাইয়া লইয়া আর একটি তাহার বয়সী মেয়ে । ভানুমতীর পরনে একখানা ভূমি রঙের খাটাে শাড়ী হাটুর উপর উঠিয়াছে গলায় সবুজ ও লাল হিংলাজের মালা, খোপায় জলজ স্পাইডার লিলি গোজা । আরও স্বাস্থ্যবতী ও লাবণ্যমন্ত্রী হইয়া উঠিয়াছে ভানুমতী—তাহার নিটোল দেহে যৌবনের উচ্ছলিত লাবণ্যের বান ডাকিয়াছে, চোখের ভাবে কিন্তু যে সরল বালিকা দেখিয়ছিলাম, সেই সরলা বালিকাই আছে । বলিলাম—কি ভানুমতী, ভাল আছ । ভানুমতী নমস্কার করিতে জানে না—আমার কথার উত্তরে সরল হাসি হাসিয়া বলিল—