পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8← বিভূতি-রচনাবলী করিয়া লয় আবার আরম্ভ করে—মাদলের বোল, জ্যোৎস্না, বর্ষান্নিগ্ধ বনভূমি, মুঠাম খাম নৃত্যপরায়ণ তরুণীর দল—সব মিলিয়া কোন বড় শিল্পীর অঙ্কিত একখানি ছবির মত জ্ঞা সুশ্ৰী –একটি মধুর সঙ্গীতের মত তার আকুল আবেদন। মনে পড়ে দূর ইতিহাসের সোলাঙ্কিরাজকন্যা ও তার সহচরীগণের এমনি ঝুলন নাচ ও গানের কথা, মনে পড়ে রাখাল বালক বাপ্পাদিত্যকে খেলার ছলে মাল্যদানের কথা । আজু কি আনন্দ, আজু কি আনন্দ ঝুলত ঝুলনে খামর চন্দ, তার চেয়েও বহু দূরের অতীতে, প্রাচীন প্রাচীন যুগের প্রস্তরযুগের ভারতের রহস্তাচ্ছন্ন ইতিহাসের সকল ঘটনা যেন আবার সম্মুখে অভিনীত হইতে দেখিলাম—আদিম ভারতের সংস্কৃতি যেন মূৰ্ত্তিমতী হইবা উঠিয়াছে সরলা পৰ্ব্বতবালা ভানুমতী ও তাহার সখীগণের নৃত্যে —হাজার হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে এমনি কত বন, কত শৈলমালা, এমনিতর কত জ্যোৎস্নারাত্রি, ভানুমতীর মত কত বালিকার নৃত্যচঞ্চল চরণের ছনে আকুল হইয়া উঠিয়াছিল, তাহদের মুখের সে হাসি আজও মরে নাই—এই সব গুপ্ত অরণ্য ও শৈলমালার আডালে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া তারা তাদের বর্তমান বংশধরগণের রক্তে আজও আনন্দ ও উৎসাহের বাণী পাঠাইয়া দিতেছে। গভীর রাত্রি। চাদ চলিয়া পডিয়াছে পশ্চিম দিকের দূর বনের পিছনে। আমরা সবাই পাহাড হইতে নামিয়া আসিলাম। সুখের বিষয় আজ আকাশে মেঘ নাই, কিন্তু আর্দ্র বাতাস শেষরাত্রে অত্যন্ত শীতল হইয়া উঠিয়াছে। অত রাত্রেও আমি খাইতে বসিলে ভানুমতী দুধ ও পেড আনিল । আমি বলিলাম—বড চমৎকার নাচ দেখলাম তোমাদের । সে সলজ্জ হাসিমুখে বলিল—আপনার কি আর ভাল লাগবে বাবুজী—আপনাদের কলকাতায় ওসব কি ছাথে ? পরদিন ভানুমতী ও তাহার প্রপিতামহ রাজা দেবের আমায় কিছুতেই আসিতে দিবে না। অথচ আমার কাজ ফেলিয়া থাকিলে চলে না, বাধ্য হষ্টয়া চলিয়া আসিলাম। আসিবার সময় ভানুমতী বলিল—বাবুজী, কলকাতা থেকে আমার জন্তে একখানা আয়ন এনে দেবেন ? আমার আয়না একখানা ছিল, অনেক দিন ভেঙে গিয়েছে । ষোল বছর বয়সের মুত্র নবযৌবনা কিশোরীর আয়নার অভাব। তবে আয়নার স্মৃষ্টি হইয়াছে কাদের জন্তে ? এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণিয়া হইতে একখানা ভাল আয়না আনাইয়া তাহাকে পাঠাইয়া দিয়াছিলাম ।