পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ X কয়েক মাস পরে। ফাল্গুন মাসের প্রথম। লবটুলিয়া হইতে কাছারি ফিরিতেছি, জঙ্গলের মধ্যে কুণ্ডীর ধারে বাংলা কথাবাৰ্ত্তায় ও হাসির শব্দে ঘোড়া থামাইলাম। যত কাছে যাই, ততই আশ্চৰ্য্য হই । মেয়েদের গলাও শোনা যাইতেছে—ব্যাপার কি ? জঙ্গলের মধ্যে ঘোড়া ঢুকাইয়া কুণ্ডীর ধারে লইয়া গিয়া দেখি বনবাউয়ের ঝোপের ধারে শতরঞ্জি পাতির আট-দশটি বাঙালী ভদ্রলোক বসিয়া গল্পগুজব করিতেছে, পাঁচ-ছয়টি মেয়ে কাছেই রান্না করিতেছে, ছ-সাতটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিয়া বেড়াইতেছে। কোথা হইতে এতগুলি মেয়ে-পুরুষ এই ঘোর জঙ্গলে ছেলেপূলে লষ্টয়া পিকনিক করিতে আসিল বুঝিতে না পা পারিয়া অবাক হইয়া দাড়াইরা আছি, এমন সময় সকলের চোখ আমার দিকে পড়িল—একজন বাংলায় বলিল—এ ছাতুটা আবার কোথা থেকে এসে জুটল এ জঙ্গলে ? আম্‌ব্ৰেলু ? আমি ঘোড়া হইতে নামিয়া তাদের কাছে যাইতে যাইতে বলিলাম—আপনার বাঙালী দেখছি—এখানে কোথা থেকে এলেন ? তারা খুব আশ্চৰ্য্য হইল, অপ্রতিভও হইল। বলিল—ও, মশায় বাঙালী ? হেঁ-হে কিছু মনে করবেন না, আমরা ভেবেছি—হেঁ-হঁ— বলিলাম—না না, মনে করবার আছে কি ! তা আপনারা কোথা থেকে আসছেন বিশেষ মেয়েদের নিয়ে— আলাপ জমিয়া গেল। এই দলের মধ্যে প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি একজন রিটারার্ড ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, রায় বাহাদুর। বাকী সকলে তার ছেলে, ভাইপো, ভাইছি, মেয়ে, নাতনী, জামাই, জামাইয়ের বন্ধু—ইত্যাদি। রা বাহাদুর কলিকাতায় থাকিতে একখানি বই পড়িয়া জানিতে পারেন, পূর্ণিয়া জেলায় খুব শিকার মেলে, তাই শিকার করিবার কোন সুবিধা হয় কিনা দেখিবার জন্য পূর্ণিয়ায় তার ভাই মুন্সেফ, সেখানেই আসিয়াছিলেন। আজ সকালে সেখান হইতে ট্রেনে চাপিয়া বেলা দশটার সময় কাটারিয়া পৌছেন। সেখানে হইতে নৌকা করিয়া কুশী নদী বাহিয়া এখানে পিকনিক করিতে আসিয়াছেন—কারণ সকলের মুখেই নাকি শুনিয়াছেন লবটুলিয়া বোমাইবুরু ও ফুলকিয়া বইহারের জঙ্গল না দেখিয়া গেলে জঙ্গল দেখাই হইল না। পিকনিক সারিয়াই চার মাইল হাটিয়া মোহনপুরা জঙ্গলের নীচে কুশী নদীতে গিয়া নৌকা ধরিবেন—ধরিয়া তাজ রাত্রেই কাটারিয়া ফিরিয়া যাইবেন। আমি সত্যই অবাক হইয়া গেলাম। সম্বলের মধ্যে দেখিলাম ইহাদের সঙ্গে আছে দো-নলা শট-গান—ইহাই ভরসা করিয়া এ ভীষণ জঙ্গলে ইহার ছেলেমেয়ে লইয়া পিকনিক্‌ করিতে আসিয়াছে! অবশু, সাহস আছে অস্বীকার করিব না, কিন্তু অভিজ্ঞ রায় বাহাদুরের আর একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল। মোহনপুরা জঙ্গলের নিকট দিয়া এদেশের জংলী