পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Ꮍ© হে অরণ্য, হে সুপ্রাচীন, আমার ক্ষমা করিও । আর একদিন গেলাম মুরতিয়াদের পার্থী-ধরা দেখিতে । স্বরতিয়া ও ছনিয়া দুটি খাচা লইয়া আমার সঙ্গে নাঢ় বইহারের জঙ্গলের বাহিরে মুক্ত প্রাস্তরের দিকে চলিল । বৈকাল বেলা, নাঢ় বইহারের মাঠে সুদীর্ঘ ছায়া ফেলিয়৷ সূৰ্য্য পাহাড়ের আড়ালে নামিয়া পড়িয়াছে। একটা শিমূলচারার তলায় ঘাসের উপর খাচা দুটি নামাইল। একটিতে একটি বড় ডাহুক অন্তটিতে গুড়গুড়ি। এ দুটি শিক্ষিত পার্থী, বন্ত পার্থীকে আকৃষ্ট করিবার জন্ত ডাছকটি অমনি ডাকিতে আরম্ভ করিল। o গুড়গুড়িটা প্রথমত: ডাকে নাই। মুরতিয়া শিস দিয়া তুড়ি দিয়া বলিল—বোলো রে বহিনিয়া—তোহর কির— গুড়গুড়ি অমনি ডাকিয়া উঠিল—গুড়-ডু-ডু-ড়— নিস্তব্ধ অপরাহ্লে বিস্তীর্ণ মাঠের নির্জনতার মধ্যে সে অদ্ভুত মুর শুধুই মনে আনিয়া দেয় এমনি দিগন্তবিস্তীর্ণতার ছবি, এমনি মুক্ত দিকৃচক্রবালের স্বপ্ন, ছায়াহীন জ্যোৎস্নালোক নিকটেই ঘাসের মধ্যে যেখানে রাশি রাশি হলুদ রঙের দুধলি ফুল ফুটিয়াছে তারই উপর ছনিয়া ফাদ পাতিল—যেন পার্থীর খাচার বেড়ার মত, বীশের তৈরী। সেই বেড়া ক’থানা দিয়া গুড়গুড়িপার্থীর খাচাটা ঢাকিয়া দিল । স্বরতিয়া বলিল—চলুন বাবুজী, লুকিয়ে বসি গে ঝোপের আড়ালে মানুষ দেখলে চিড়িয়া ভাগবে –সবাই মিলিয়া আমরা শাল-চারার আড়ালে কতক্ষণ ঘাপটি মারিয়া বসিয়া রহিলাম।— ডাহুকটি মাঝে মাঝে থামিতেছে—গুড়গুড়ির কিন্তু রবের বিরাম নাই—একটানা ডাকিয়াই চলিয়াছে—গুড়-ডু-ডু-ড়— সে কি মধুর অপার্থিব রব! বলিলাম—স্বরতিয়া, তোদের গুড়গুড়িটা বিক্ৰী করব ? কত দাম ? স্বরতিরা বলিল—চুপ চুপ বাবুজী, কথা বলবেন না—ঐ শুনুন বুনো পাখী আসছে— কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিবার পরে দ্য একটি স্বর মাঠের উত্তর দিকে বন-প্রান্তর হইতে ভাসিয়া আসিল-গুডু-ডু-ডু-ডু । আমার শরীর শিহরিয়া উঠিল। বনের পার্থী খাচীর পার্থীর সুরে সাড়া দিয়াছে। ক্রমে সে মুর খাচার নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল। কিছুক্ষণ ধরিয়া দুইটি পাখীর রব পাশাপাশি শোনা যাইতেছিল, ক্রমে দুইটি স্বর যেন মিশিয়া এক হইয়া গেল, হঠাৎ আবার একটা স্বর.একটা পাখীই ডাকিতেছে.খাচার পাখীট ।