ぶや湾5° Tবভূতি-রচনাবলী সরস্বতী কুওঁীর জমি আমি কেন বিলি করিতে বিলম্ব করিতেছি। নানা ওজর-আপত্তি তুলিয়া এখনও পৰ্য্যন্ত রাখিয়াছি বটে, কিন্তু বেশী দিন পারিব না। মাহুষের লোভ বড় বেশী, দুটি ভুট্টার ছড়া আর চীনাঘাসের এককাঠা দানার জন্ত প্রকৃতির অমন স্বপ্নকুঞ্জ ধ্বংস করিতে তাহদের কিছুমাত্র বাধিবে না, জানি । বিশেষ করিয়া এখানকার মানুষে গাছপালার সৌন্দৰ্য্য বোঝে না, রম্য ভূমিত্রীর মহিমা দেখিবার চোখ নাই, তাহারা জানে পশুর মত পেটে খাইয়া জীবন যাপন করিতে। অন্ত দেশ হইলে আইন করিয়া এমন সব স্থান সৌন্দৰ্য্যপিপাসু প্রকৃতি-রসিক নরনারীর জন্য মুরক্ষিত করিয়া রাথিত, যেমন আছে কালিফোর্নিয়ার যোসেমাই স্কাশনাল পার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক, বেলজিয়ান কঙ্গোতে আছে পার্ক ন্যাশনাল আলবার্ট। আমার জমিদাররা ও ল্যাগুস্কেপ বুঝিবে না, বুঝিবে সেলামীর টাকা, খাজনার টাকা, আদায় ইরশাল, হস্তবুদ । এই জন্মান্ধ মানুষের দেশে একজন যুগলপ্রসাদ কি করিয়া জন্মিয়াছিল জানি না—শুধু তাহারই মুখের দিকে চাহিয়া আজও সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী অক্ষুন্ন রাখিয়াছি। কিন্তু কতদিন রাখিতে পারিব ? যাক, আমারও কাজ শেষ হইয়া আসিল বলিয়া । প্রায় তিন বছর বাংলা দেশে যাই নাই—মাঝে মাঝে বাংলা দেশের জন্ত মন বড় উতলা হয়। সারা বাংলা দেশ আমার গৃহ-তরুণী কল্যণী বধু সেখানে আপন হাতে সন্ধ্যাপ্রদীপ দেখায় ; এখানকার এমন লক্ষ্মীছাড উদাস ধুধু প্রান্তর ও ঘন বনানী নয়—যেখানে নারীর হাতের স্পর্শ নাই । কি হইতে যেন মনে অকারণ আনন্দের বান ডাকিল তাহা জানি না । জ্যোৎস্না-রাত্রি— তখনই ঘোড়ায় জিন কফিয়া সরস্বতী কুণ্ডীর দিকে রওনা হইলাম, কারণ তখন নাঢ় ও লবটুলিয়া বইহারের বনরাজি শেষ হইয়া আসিয়াছে—যাহা কিছু স্বরণ্য-শোভা ও নির্জনত আছে তখনও সরস্বতীর তীরেই। আমি মনে মনে বেশ বুঝিলাম, এ আনন্দকে উপভোগ করিবার একমাত্র পটভূমি হইতেছে সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী। ঐ সরস্বতীর জল জ্যোৎস্নালোকে চিক্ চিকু করিতেছে—চিক্ চিক্ করিতেছে কি শুধু ? ঢেউয়ে ঢেউয়ে জ্যোৎস্না ভাঙিয়া পড়িতেছে। নির্জন, স্তব্ধ বনানী হ্রদের জলের তিন দিকে বেষ্টন করিয়া, বন্ত লাল হাসের কাকলী, বন্ত শেফালী-পুষ্পের সৌরভ ; কারণ যদিও জ্যৈষ্ঠ মাস, শেফালীফুল এখানে বারোমাস ফোটে। কতক্ষণ হ্রদের তীরে এদিকে ওদিকে ইচ্ছামত ঘোড়া চালাইয়া বেড়াইলাম। হ্রদের জলে পদ্ম ফুটিয়াছে, তীরের দিকে ওয়াটারক্রোফুট ও যুগলপ্রসাদের আনীত স্পাইডার লিলির ঝাড় বাধিয়াছে। দেশে চলিয়াছি কতকাল পরে, এ নির্জন অরণ্যবাস হইতে মুক্তি পাইব, সেখানে বাঙালী মেয়ের হাতে রান্না খাদ্য খাইয়া বাচিব, কলিকাতায় এক-আধ দিন থিয়েটার-বায়োস্কোপ দেখিব, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কত কাল পরে আবার দেখা হইবে। এইবার ধীরে ধীরে সে অনুভূত আনন্দের বঙ্গ আমার মনের কুল ভাসাইরা দোলা দিতে