পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>bペ বিভূতি-রচনাবলী গিয়া দেখি গ্র্যান্ট সাহেবের বটগাছের ওদিকে ( আজ প্রায় ত্রিশ বছর আগে গ্র্যান্ট সাহেব আমীন লবটুলিয়ার বস্ত মহাল জরীপ করিতে আসিয়া এই বটতলায় তাবু ফেলেন, সেই হইতেই গাছটির এই নাম চলিয়া আসিতেছে ) একটা বনঝোপে একটা অৰ্জুন গাছের তলায় একটা লোক ছেড়া ময়ল নেকড়াকনি পাতিয়া শয্যা রচনা করিয়া শুইয়া আছে। ঝোপের অন্ধকারে লোকটিকে ভাল করিয়া দেখিতে না পাইয়া বলিলাম—কে ওখানে ? বাড়ী কোথায় ? বের হয়ে এস— লোকটি বাহির হইয়া আসিল-অনেকট হামাগুড়ি দিয়া, অতি ধীরে ধীরে—বয়স পঞ্চাশের উপর, জীর্ণশীর্ণ চেহারা, মলিন ছেড়া কাপড় ও মেরজাই গায়ে,—যতক্ষণ সে ঝোপের ভিতর হইতে বাহির হইতেছিল, কি একরকম, অদ্ভূত, অসহায় ভাবে শিকারীর তাড়া খাওয়া পশুর মত ভয়ার্ভ দৃষ্টিতে আমার দিকে চাহিয়া ছিল। ঝোপের অন্ধকার হইতে দিনের আলোয় বাহির হইয়া আসিলে দেখিলাম, তাহার বাম হাতে ও বাম পায়ে ভীষণ ক্ষত। বোধ হয় সেই জন্য সে একবার বসিলে বা শুইলে হঠাৎ আর সোজা হইয়া দাড়াইতে পারে না । মুনেশ্বর সিং বলিল—হুজুর, ওর ওই ঘায়ের জন্তই ওকে বস্তিতে ঢুকতে দেয় না—জল পৰ্য্যন্ত চাইলে দেয় না। ঢিল মারে, দূর দূর করে তাডিয়ে দেয়— বোঝা গেল তাই এ লোকটা বনের পশুর মত বন-ঝোপের মধ্যেই আশ্রয় লইয়াছে এই হেমস্তের শিশিরাদ্র রাত্রে । বলিলাম—তোমার নাম কি ? বাড়ী কোথায় ? লোকটা আমায় দেখিয়া ভয়ে কেমন হইয়া গিয়ছে—ওর চোখে রোগকাতর ও ভীত অসহায় দৃষ্টি। তা ছাড়া আমার পিছনে লাঠি-হাতে মুনেশ্বর সিং সিপাহী ! বোধ হয় সে ভাবিল, সে যে বনে আশ্রয় লইয়াছে তাহাতেও আমাদের আপত্তি আছে—তাহাকে তাড়াইয়া দিতেই আমি সিপাই সঙ্গে করিয়! সেখানে গিয়াছি। বলিল—আমার নাম ?—নাম হুজুর গিরধারীলাল, বাড়ী তিনটাঙ । পরক্ষণেই কেমন একটা অদ্ভুত মুরে—মিনতি, প্রার্থন এবং বিকারের রোগীর অসঙ্গত আবদারের স্বর এই কয়টি মিলাইয়া এক ধরনের মুরে বলিল—একটু জল খাব—জল— আমি ততক্ষণে লোকটাকে চিনিয়া ফেলিয়াছি। সেবার পৌষ মাসের মেলার ইজারাদার ব্ৰহ্মা মাহাতোর তাবুতে সেই যে দেখিয়াছিলাম—সেই গিরধারীলাল। সেই দৃষ্টি, সেই নম্র মুখের ভাব— দরিদ্র, নম্র, ভীরু লোকদেরই কি ভগবান জগতে এত বেশী করিয়া কষ্ট দেন । মুনেশ্বর সিকে বলিলাম—কাছারি যাও—চার-পাঁচজন লোক আর একটা চারপাই নিয়ে এস– সে চলিয়া গেল । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম—কি হয়েছে গিরধারীলাল ? আমি তোমার চিনি। তুমি আমার চিনতে পার নি ? সেই যে সেবার ব্রহ্মা মাহাতোর তাবুতে মেলার সময় তোমার