পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)నశి বিভূতি-রচনাবলী একটু দূরে দাওয়ার ওপাশে যুগলপ্রসাদ রান্না করিতেছে। তাহার কাঠের উইনের আলোর দাওয়ার খানিকট আলো হইয়াছে। এদিকে দাওয়ার অৰ্দ্ধেকটায় জ্যোৎস্না পড়িয়াছে, যদিও কৃষ্ণপক্ষের আজ মোটে তৃতীয়া-ধনঝরি পাহাড়ের আড়াল কাটাইয়া এই কিছুক্ষণ মাত্র চাদ ফণকা আকাশে দৃশুমান হইয়াছে। সামনে কিছুদূরে অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি পাহাড়শ্রেণী—চকুমকিটোলার বস্তির ছেলেপুলেদের কথা ও কলরব শোনা যাইতেছে। কি মুন্দর ও অপূৰ্ব্ব মনে হইতেছিল এই বন্ত গ্রামে যাপিত এই রাত্রিটি। ভানুমতীর তুচ্ছ ও সাধারণ গল্পও কি আনন্দই দিতেছিল। সেদিন বলভদ্রের মুখে শোনা সেই উন্নতি করিবার কথা মনে পডিল । মামুষে কি চায়—উন্নতি, না আনন্দ ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাঁহাতে আননা নাথাকে ? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্তি ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ক্ষইয়া ভোতা— এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহীদের নিকট একঘেরে, একরঙl, অর্থহীন। মন শান-বাধানো—রস ঢুকিতে পায় না। এখানেই যদি থাকিতে পারিতাম ! ভানুমতীকে বিবাহ করিতাম। এই মাটির ঘরের জ্যোৎস্না-ওঠা দাওয়ায় সরলা বন্যবালা রাধিতে রাধিতে এমনি করিয়া ছেলেমানুষী গল্প করিত —আমি বসিয়া বসিরা শুনিতাম। আর শুনিতাম বেশী রাত্রে ওই বনে হুডালেব ডাক, বনমোরগের ডাক, বস্ত হস্তীর বৃংহতি, হায়েনার হাসি। ভানুমতী কালো বটে, কিন্তু এমন নিটোল স্বাস্থ্যবতী মেয়ে বাংলা দেশে পাওয়া যায় না। আর ওর ওই সতেজ সরল মন! দয়া আছে, মায়া আছে, স্নেহ আছে,—তার কত প্রমাণ পাইয়াছি । ভাবিতেও বেশ লাগে । কি মুন্দর স্বপ্ন ! কি হইবে উন্নতি করিয়া ? বলভদ্র সেঙ্গং গিয়া উন্নতি কৰুক রাসবিহারী সিং উন্নতি করুক । যুগলপ্রসাদ জিজ্ঞাসা করিল, রান্না হইয়াছে, চৌকা লাগাইবে কিনা। ভানুমতীদের বাড়ীতে আতিথ্যের কোন ক্রটি হয় না। এদেশে আনাজ মেলে না, তবুও কোথা হইতে জগরু বেগুন ও আলু আনিয়াছে। মাষকলাইয়ের ডাল, পাখীর মাংস, বাড়ীতে তৈরী অতি উৎকৃষ্ট টাটকা ভয়স ঘি, দুধ। যুগলপ্রসাদের হাতের রান্নাও চমৎকার। ভানুমতী, জগরু, জগরুর দাদা, নিছনি—সবাই আজ আমাদের এখানে খাইবে—আমি খাইতে বলিয়াছি। কারণ এমন রান্না উহার কখনও থাইতে পায় না। বলিলাম—একটু দূরে উহারাও একসঙ্গে সবাই বহ্মক। যুগলপ্রসাদের দেওয়ারও সুবিধা হইবে। একত্র খাওয়া यांक ! ওরা রাজী হইল না। আমাদের আগে না খাওয়া হইলে উহারা থাইবে না । পরদিন আসিবার সময় ভানুমতী এক কণও করিল। হঠাৎ আমার হাত ধরিয়া বলিল-আজ যেতে দেব না বাবুজী— আমি অবাক হইয়া উহার মুখের দিকে চাহিয়া রছিলাম। কষ্ট হইল।