পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম পরিচ্ছেদ > পনের-ষোল বছর আগেকার কথা। বি. এ. পাস করিয়া কলিকাতায় বসিয়া আছি। বছ জায়গায় ঘুরিরাও চাকুরী মিলিল না। সরস্বতী-পূজার দিন। মেসে অনেকদিন ধরিয়া আছি তাই নিতান্ত তাডাইরা দেয় না, কিন্তু তাগাদার উপর তাগাদ দিয়া মেসের ম্যানেজার অস্থির করিয়া তুলিয়াছে। মেলে প্রতিমা গড়াইয়া পূজা হইতেছে-ধুমধামও মন্দ নয়, সকালে উঠিয়া ভাবিতেছি আজ সব বন্ধ, দু-একটা জায়গায় একটু আশা দিয়াছিল, তা আজ আর কোথাও যাওয়া কোন কাজের হইবে না, বরং তার চেয়ে ঘুরিয়া ঘুরিয়া ঠাকুর দেখিয়া বেড়াই। মেসের চাকর জগন্নাথ এমন সময় একটুকরা কাগজ হাতে দিয়া গেল। পড়িয়া দেখিলাম ম্যানেজারের লেখা তাগাদার চিঠি। আজি মেসে পূজা-উপলক্ষে ভাল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হইয়াছে, আমার কাছে দু-মাসের টাকা বাকী, আমি যেন চাকরের হাতে অন্তত দশটি টাকা দিই। অন্যথা কাল হটতে খাওয়ার জন্য আমাকে অন্যত্র ব্যবস্থা করিতে হইবে। কথা খুব ন্যায্য বটে, কিন্তু আমার সম্বল মোটে দুটি টাকা আর কয়েক আনা পয়সা। কোন জবাব না দিয়াই মেস হইতে বাহির হইলাম। পাডার নানা স্থানে পূজার বাজনা বাজিতেছে, ছেলেমেয়েরা গলির মোডে দাডাইয়া গোলমাল করিতেছে ; অভয় ময়রার খাবারের দোকানে অনেক রকম নতুন খাবার থালায় সাজানো—বড়রাস্তার ওপারে কলেজ হোস্টেলের ফটকে নহবৎ ,সয়াছে। বাজার হইতে দলে দলে লোক ফুলের মালা ও পূজার উপকরণ কিনিয়া ফিরিতেছে। ভাবিলাম কোথায় যাওয়া যায়। আজ এক বছরের উপর হইল জোড়াসাকো স্কুলের চাকুরী ছাডিয়া দিয়া বসিয়া আছি—অথবা বসিয়া ঠিক নাই, চাকুরীর খোজে হেন মার্চেন্ট আপিস নাই, হেন স্কুল নাই, হেন খবরের কাগজের আপিস নাই, হেন বড়লোকের বাড়ী নাই—যেখানে অন্তত দশ বার না হাটাগটি করিয়াছি, কিন্তু সকলেরই এক কথা, চাকুরী খালি নাই। হঠাৎ পথে সতীশের সঙ্গে দেখা। সতীশের সঙ্গে হিন্দু হোস্টেলে একসঙ্গে থাকিতাম। বর্তমানে সে আলীপুরের উকীল, বিশেষ কিছু হয় বলিয়া মনে হয় না, বালিগঞ্জের ওদিকে কোথায় একটা টিউশনি আছে, সেটাই সংসারসমূদ্রে বর্তমানে তাহার পক্ষে ভেলার কাজ । করিতেছে। আমার ভেলা তো দূবের কথা, একখানা মাস্তুল-ভাঙা কাঠও নাই, যতদূর হাবুডুবু খাইবার তাহ খাইতেছি—মৃতীশকে দেখিয়া সে কথা আপাতত ভুলিয়া গেলাম। ভুলিয়া গেলাম তাহার আর একটা কারণ, সতীশ বলিল—এই যে, কোথায় চলেছ সত্যচরণ ?