পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وl\ চল হিন্দু হোস্টেলের ঠাকুর দেখে আসি—আমাদের পুরনো জায়গাটা। আর ওবেলা বড় জলসা হবে—এসো। ওয়ার্ড সিক্সের সেই অবিনাশকে মনে আছে, সেই যে ময়মনসিংহের কোন জমিদারের ছেলে, সে যে আজকাল বড় গায়ক। সে গান গাইবে, আমায় আবার একখানা কার্ড দিয়েছে তাদের এস্টেটের দু-একটা কাজকৰ্ম্ম মাঝে মাঝে করি কিনা। এসো, তোমায় দেখলে সে খুশী হবে। কলেজে পড়িবার সময়, আজ পাঁচ-ছয় বছর আগে, আমোদ পাইলে আর কিছু চাহিতাম না—এখনও সে মনের ভাব কাটে নাই দেখিলাম। হিন্দু হোস্টেলে ঠাকুর দেখিতে গিয়া সেখানে মধ্যাহ্ন-ভোজনের নিমন্ত্রণ পাইলাম। কারণ আমাদের দেশের অনেক পরিচিত ছেলে এখানে থাকে, তাহারা কিছুতেই আসিতে দিতে চাহিল না। বলিলাম—বিকেলে জলসা হবে, তা এখন কি ! মেস থেকে খেয়ে আসব এখন। তাহারা সে কথায় কর্ণপাত করিল না। কৰ্ণপাত করিলে আমাকে সরস্বতী-পূজার দিনটা উপবাসে কাটাইতে হইত। ম্যানেজারের অমন কড়া চিঠির পরে আমি গিয়া মেসের লুচি পয়েসের ভোজ খাইতে পারিতাম না—যখন একটা টাকাও দিই নাই। এ বেশ হইল—পেট ভরিয়া নিমন্ত্রণ খাইয়া বৈকালে জলসার আসরে গিয়া বসিলাম। আবার তিন বৎসর পূর্বের ছাত্র-জীবনের উল্লাস ফিরিয়া আসিল—কে মনে রাখে যে চাকুরী পাইলাম কি না-পাইলাম, মেসের ম্যানেজার মুখ হাড়ি করিয়া বসিয়া আছে কি না-আছে। ইংরি ও কীৰ্ত্তনের সমুদ্রে তলাইয়া গিয়া ভুলিয়া গেলাম যে দেন মিটাইতে না পারিলে কাল সকাল হইতে বায়ুভক্ষণের ব্যবস্থা হইবে। জলসা যখন ভাঙিল তখন রাত এগারটা। অবিনাশের সঙ্গে আলপি হইল, হিন্দু হোস্টেলে থাকিবার সময় সে আর আমি ডিবেটিং ক্লাবের চাই ছিলাম—একবার স্তর গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা সভাপতি করিয়াছিলাম। বিষয় ছিল, স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলক ধৰ্ম্মশিক্ষণ প্রবর্তন করা উচিত"। অবিনাশ প্রস্তাবকৰ্ত্ত আমি প্রতিবাদী পক্ষের নায়ক। উভয় পক্ষের তুমুল তর্কের পর সভাপতি আমাদের পক্ষে মত দিলেন। সেই হইতে অবিনাশের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হইয়া যায়—যদিও কলেজ হইতে বাহির হইয়। এই প্রথম আবার তার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ । v অবিনাশ বলিল—চল, আমার গাড়ী রয়েছে—তোমাকে পৌছে দিই। কোথায় থাক ? মেসের দরজায় নামাইয়া দিয়া বলিল—শোন, কাল হ্যারিংটন স্ট্রটে আমার বাড়ীতে চা থাবে বিকেল চারটের সময়। ভুলো না যেন । তেত্রিশের দুই। লিখে রাখ তো নোট-বইয়ে। পরদিন খুজিয়া হ্যারিংটন স্ট্রট বাহির করিলাম, বন্ধুর বাড়ীও বাহির করিলাম। বাড়ী খুব বড় নয়, তবে সামনে পিছনে বাগান। গেটে উইন্টারিয়া লতা, নেপালী দারোয়ান, ও পিতলের প্লেট । লাল সুরকীর বাকী রাস্তা—রাস্তার এক ধারে সবুজ ঘাসের বন, অন্ত ধীরে বড় বড় মুচুকুন্দ চাপা ও আমগাছ। গাড়বারান্দায় বড় একখানা মোটর গাড়ী। বড়লোকের বাড়ী নয় বলিয়া ভুল করিবার কোন দিক হইতে কোন উপায় নাই। সিড়ি দিয়া উপরে উঠিয়াই বসিবার ঘর। অবিনাশ আসিয়া আদর করিয়া ঘরে বসাইল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই