পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত 을et গঙ্গাচরণ আশ্চৰ্য্য হবার সুরে বললে—সে কি ? এই যে সেদিন কাঠ কাটিয়ে দিলাম এক-গাড়ী। সব পুড়িয়ে ফেললে এর মধ্যে ? অনঙ্গ রাগ করে বললে—কাঠ কি খাবার জিনিস যে খেয়ে ফেলেচি ? রোজ এক ছাড়ি ধান সেদ্ধ হবে, চিড়ে, কোটা হোল দশ-বারো কাঠা—এতে কাঠ খরচ হয় না ? অনঙ্গ কথাটা একটু গৰ্ব্ব ও আনন্দের স্বরেই বলল, কারণ সে যে দরিদ্র ঘর থেকে এসেচে সেখানে একদিনে এত ধানের চিড়েকোটারূপ সচ্ছলতা স্বপ্নের বিষয় ছিল—যে-দারিদ্র্যের মধ্যে এসে পড়েছিল প্রথম শ্বশুরবাড়ী এসে, এখন সে-কথা ভাবতেও যেন পারা যায় না। বাসুদেবপুর এসে আগের চেয়ে অবিপ্তি অবস্থা ভালই হয়েছিল। তবে সে গ্রামে শুধু পাঠশালার ছেলে পড়ানোর আয় ছিল সম্বল, জিনিসপত্র কেউ দিত না । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এখনও বাসুদেবপুর নিয়ে কথা ওঠে। א সেদিনই দুপুরের পর আহারাস্তে গঙ্গাচরণ একটু বিশ্রাম করছিল, অনঙ্গ এসে বললে— বাসুদেবপুর আবার যাবার ইচ্ছে আছে ? গঙ্গাচরণ বিস্ময়ের সঙ্গে বললে—কেন বল দিকি ? —না তাই বলচি । সেখানকার ঘরখানা তো এখনও রেখেই দিয়েচ, বিক্রি করেও তো এলে না । —তখন কি জানি এখানে বেশ জমে উঠবে ? —ভাতছালার জন্তে কিন্তু মন কেমন করে । সেখানকার পদ্মবিলের কথা মনে আছে ? –পদ্মবিল তো ভালই ছিল। বেশ জল । —চত্তির মাসে জল থাকতো না বটে, কিন্তু না থাকুক বাপু, গাখানার লোকগুলো ছিল বডড ভাল। তিনদিকে মা , একদিকে অতবড় বিল, সুন্দর দেখতে ছিল। —তুমি তো বলেছিলে পদ্মবিলের ধারে ঘর বাঁধবে। —ভেবেছিলাম নতুন খড় উঠলেং পদ্মবিলের ধারে ঘর তৈরি করবো। লোকজনকে বলেও রেখেছিলাম। সস্তায় খড় দিত। অনঙ্গ আপন মনে হিসেব করবার ভজিতে বললে আঙুল গুণে গুণে—হরিহরপুরে বিয়ে হোল। সেখান থেকে ভাতছালা, তারপর বাসুদেবপুর, তারপর এখানে। অনেক দেশ বেড়ানো হোল আমাদের—কি বলে ? গঙ্গাচরণ গর্বের সুরে বললে—বলি হরিহরপুর গায়ের ক'জন এত দেশ দেখে বেড়িয়েচে ? অনঙ্গ-বললে—শুধু দেখে বেড়ানো কি বলে গো! বাসও করা হয়েচে। —নিশ্চয়ই। —কিন্তু একটা কথা বাপু... -कि ? 酸 —এ গা ছেড়ে অন্ত কোথাও আর যেও না । —ষদিন চলা-চলতির সুবিধে থাকে, থাকবো বৈকি। এখন তো বেশই হচ্ছে—বিশ্বাস