পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&S 8 বিভূতি-রচনাবলী —দুর পোড়ারমূখী, ব্রাহ্মণের আবার ভয় কি রে? —ভূতে বামুন-বোষ্টম মানে না বৌদি, সত্যি কথা বলচি। সেবার হোল কি— মতি মুচিনী ভয় পেয়ে বললে—বাদ দেও, ওসব গল্প এখন করে না। এই খেজুরের চটখানা পেতে শুয়ে পড় বামুন-দিদির পাশে । অনঙ্গ-বৌয়ের মনে আজ খুব আনন্দ । অনেকদিন পরে সে তার পুরোনো ঘরে ফিরে এসেচে। আবার পুরোনো সঙ্গিনীদের সঙ্গে দেখা হয়েচে । পদ্মবিলের ওপর এমন জ্যোৎস্ন রাত্রি কতকাল সে দেখে নি। অথচ এখানে যখন ছিল, তখন কোনদিন খাওয়া জুটতো, কোনদিন জুটতো না। এই মতি মুচিনী কত পাকা আম কুড়িয়ে এনে দিয়েচে, লোকের গাছের পাকা কাটাল চুরি করে পর্যন্ত এনে খাইয়েচে । এই কালী গোয়ালিনী বাড়ী থেকে ভাইবোঁকে লুকিয়ে নতুন ধানের চিড়ে এনে দিয়েচে । অনঙ্গ-বেী বিলের জলের দিকে চেয়ে অন্তমনস্কভাবে বললে—মনে আছে কালী সেই একদিন লক্ষ্মীপূজোর রাতের কথা ? কালী মৃদ্ধ হেসে চুপ করে রইল। বামুনের মেয়েকে খাবার যোগাড় ক’রে দিয়েচে একদিন, তা কি সে এখন মুখে বলবে ? —মনে নেই ? —ও কথা ছেড়ে দাও বৌদিদি। —তুই সেদিন চিড়ে না আনলে উপোস দিতে হোত। —আবার ও কথা ? ছিঃ– অনঙ্গ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললে—৫ই পদ্মবিলের ওখানটাতে একটা শোল মাছ ধরেছিলাম মনে আছে মতি ? মতি বললে—গামছা দিয়ে। ওমা, সেদিনের কথা যে! খুব মনে আছে। তুমি আর আমি নাইতি গিয়েছিলাম—- —মস্ত বড় মাছটা ছিল । না রে ? —ভাল কথা মনে হোল। কাল মনে করে দিয়ো দিকিনি। দেওর মাছ ধরবে কাল, একটা বাণ মাছ কাল খাওয়াবো বামুনদিদিকে। বডড সোয়াদ বিলির মাছের— —সে যেন তুই আমায় নতুন শেখাচ্চিস মতি! কালী বলে উঠলো—ওই শোনো মতির কথা ! মুচি তা আর কত বুদ্ধি হবে ? বৌদিদি যেন আর এ গায়ের মানুষ না ? দুদিনের জন্তে চলে গিয়েচে তাই কি ? আবার ফিরে আসবে না বৌদি ? —কেন আসবো না ? আমার সাধ ছিল পদ্মবিলের একেবারে ধারে একখানা ঘর বাধবো । —তোমার এ ঘরও তো বিলের ধারে বৌদি ? কত দূর আর ? ওই তো কাছেই। —ত না রে, বিলের একেবার ধারে ওই যে বাশঝাড়টা ওরই পাশে ঘর বাধবার ইচ্ছে