পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত *め@ ছিল। বেশ ভালো হোত না ? —এখন বাধো। আমি বঁাশ, খড় সব জুটিয়ে দেবো বাবাকে বলে। অনঙ্গ-বেয়ের ঘুম এল না অনেক রাত পৰ্য্যন্ত। সে ভাবছিল তার জীবনের গত দিনগুলির কথা। ছুতোরখালি গ্রামে তার বাপের বাড়ী। বাবা ছিলেন সামান্ত অবস্থার গৃহস্থ, জমিজমার সামান্ত আয়ে সংসার চালাতেন । হরিহরপুরে কি একটা কাজে গিয়ে গঙ্গাচরণের বাবার সঙ্গে আলাপ হয়—সেই স্বত্রে মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ করেন গঙ্গাচরণের সঙ্গে। কিন্তু বিবাহের কিছুদিন পূৰ্ব্বেই হঠাৎ তিনি মারা যান। মামাদের চেষ্টায় ও গঙ্গাচরণের বাবার দয়ায় হরিহরপুরেই বিবাহ হয় ! একখানা মাত্র লালপাড় শাড়ী ও মায়ের হাতের সোনা-বাধানে শাখা—এর বেশি কিছু জোটে নি অনঙ্গবৌয়ের ভাগ্যে বিয়ের সময়ে। এদিকে বিয়ের কিছুদিন পরে গঙ্গাচরণের বাবাও মারা গেলেন। গঙ্গাচরণের জ্ঞাতিরা নানারকম শক্রতা করতে লাগলো। হরিহরপুরে একখানা পুরোনো কোঠাবাড়ী ও একটা আমবাগান ছাড়া অন্ত কিছু আয়কর সম্পত্তি ছিল না, জ্ঞাতিদের শক্রতার অবস্থা শেষে এমন দাঁড়ালো যে আমবাগানের একটি আমিও ঘরে আসে না । কোনো আয় ছিল না। সংসারের, উঠোনের মানকচু তুলে কামারগাতির হাটে নিজের মাথার করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে গঙ্গাচরণকে চাল কিনে আনতে হয়েছে, তবে স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলেচে। . একদিন খুব বর্ষার দিন। ফুটে ছাদ দিয়ে জল পড়ে ঘর ভেসে যাচ্চে, অনঙ্গ-বেী স্বামীকে বললে—হঁ্যা গা, বাড়ীঘর না সারালে এখানে তো আর থাকা যায় না ? গঙ্গাচরণ বললে—কি করি বেী, বসন্ত মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করি নি ভাবচো । আমি বসে নেই। দুশোটি টাকার এক পয়সার কমে ও ছাদে উঠবে না। —কোথায় পাবে দুশো টাকা ? দুটাকার সম্বল আছে তোমার ? আমার পরামর্শ শোনো, এ-দেশ ছেড়ে চলো অন্ত জায়গায় যাই । —কোথায় যাই বলে দেশ ছেড়ে, কে জায়গা দেবে ? —সে কথা আমি জানি ? পুরুষমাতুষ—সে তুমি বোঝে। আর জ্ঞাতি-শজুরের সঙ্গে বিবাদ করে এখানে টিকে থাকতে পারবেও না তুমি। " সেই হোল ওদের দেশত্যাগের স্বত্রপাত। তারপর আশ্বিন মাসে পূজোর পরই ওরা প্রথমে এল এই ভাতছালা। এখানে প্রথম প্রথম ভালই চলেছিল, পরে একটু অসুবিধে হয়ে গেল। তার প্রধান কারণ, ভাতছালায় এরা এসেছিল স্থানীয় গোয়ালার ধানের জমি করে দেবে আশা দিয়েছিল বলে। কিন্তু দু’বছর হয়ে গেল, ধানের জমির কোনো বন্দোবস্তই আর হয়ে উঠলো না। এক বেলা খাওয়া হয় ওদের তো অন্ত বেলা হয় না। সেই সময় এই কালী গোয়ালিনী যথেষ্ট সাহায্য করেছিল ওদের। বিরক্ত হয়ে ওরা এখান থেকে উঠে যায় বামুদেবপুরে। সেখানে অন্ত সুবিধে মন ছিল না, কিন্তু