পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ বিভূতি-রচনাবলী —আপনি ওখানে কি রকম পান ? —মাইনে পাই তিন টাকা ইস্কুল থেকে। গবর্ণমেন্টের এড পাই দেড় টাকা। ইউনিয়ন বোর্ডের এড, পাই ন’-সিকে মাসে। এই ধরুন সৰ্ব্বসাকুল্যে পৌনে সাত টাকা। তা এক রকম চলে যায়— গঙ্গাচরণ বললে—মাসে মাসে পান তো ? দুর্গাপদ বাড়য্যে গর্কের স্বরে বললে—নিশ্চয়ই, এ হোল গবৰ্ণমেন্টের কারবার। এতে কোনো গোলমাল হবার জোটি নেই। তবে মোটে সাত টাকায় সংসার ভাল চলে না। —মশায়ের ছেলেপিলে কি ? —একটি মাত্র মেয়ে, আর আমার পরিবার। তবে আমার বিধবা ভগ্নী আমার সংসারেই থাকে । সাত টাকায় এতগুলি লোকের— —আর কিছু আয় নেই ? —আজ্ঞে না । আমি বিদেশী লোক, ওখানে আর কি আর থাকবে ? —ও গ্রামে কি ব্রাহ্মণের বাস বেশি ? নাকি অন্য অন্য জাতও আছে ? আপনি সঙ্গে সঙ্গে দশকৰ্ম্ম ধরুন না কেন ? এই ধরুন লক্ষ্মীপুজো মনসাপুজে, ষষ্ঠীপুজোটুজো— —ও-সব চলবে না । সেখানে পুরুত অাছে গ্রামে। ব্রাহ্মণের গ্রাম— —ওখানেই আপনি ভুল করেচেন –এই! গোলমাল করবি তো একেবারে পিঠের ছাল তুলবো সব। ব্রাহ্মণের গ্রামে বসতে নেই কক্ষনে। ওতে পসার হয় না মশাই— —কথাটা ঠিকই বলেচেন। আপনি বেশ আছেন, ডাব আনতে বললেন অমনি ডাব এসে হাজির ৷ এমন না হোলে বাসের সুখ । আমার আর কোনো আয় নেই ওই পৌনে সাত টাকা ছাড়া । তবে ধরুন কলাটা, বেগুনটা মধ্যে মধ্যে ছাত্রেরা আনে । দুর্গাপদ বাড়য্যে কথাবাৰ্ত্তার ফাঁকে অন্তমনস্ক হয়ে কি ভাবতে লাগলো। পুনরায় তামাক সেজে যখন স্থকো তার হাতে দেওয়া হোল, তখন বললে—একটা কথা ভাবচি– —কি বলুন ? —দু’জনে মিলে একটা আপার প্রাইমারি ইস্কুল গড়ে তুলি না কেন ? আপনি কি গুরুট্রেনিং পাস ? -मां । দুর্গাপদ চিন্তাকুল ভাবে বললে—তাই ত । গুরুট্রেনিং পাস না থাকলে হেড মাস্টার হতে পারবেন না যে! বাইরে থেকে আবার কাউকে আনলে তাকে ভাগ দিতে হবে কিনা ? সে নিজের কোলে সব ঝোল টেনে নেবে। তাতে সুবিধে হবে না—আমার ওখানে আর ভাল লাগচে না। সঙ্গী নেই, দুটো কথা কইবার মানুষ নেই—ব্রাহ্মণ যা আছে, সব অশিক্ষিত, চাষবাসই নিয়ে আছে। সংসার অনিত্য, আমি মশাই আবার একটু ধৰ্ম্মকথা, একটু সৎ আলোচনা বডড পছন্দ করি। গঙ্গাচরণ মনে মনে বললে—এই রে, খেয়েচে !—মুখে বললে—সে তো খুব ভালো কথা ।