পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९२e বিভূতি-রচনাবলী লোকটা এবার উৎসাহ পেয়ে বললে—আপনি যা বলেন পণ্ডিতমশাই। আমাদের গায়ে আমরা ষাট-সত্তর ঘর বাস করি। হিছ-মোছলমানে মিলে চাদ তুলে খরচ যোগাবো। প্রাণ নিয়ে কথা, আশপাশের গা মরে উজোড় হয়ে যাচ্চে, যদি পয়সা খরচ কল্পি আমাদের প্রাণগুলো বাচে-- —নদীর জল খাও ? —আজ্ঞে হা, আমাদের গায়ের নিচেই বাওড়-বাওড়ের জল খাই । —গ বন্ধ করলে বাওড়ের জল আর খেতে পাবে না কেউ । পাতকুয়োর জল খেতে হবে । —সে আপনি যেমন আজ্ঞে করবেন—কত খরচ হবে বলুন। গঙ্গাচরণ মনে মনে হিসেব করবার ভঙ্গি করে কিছুক্ষণ পরে বললে—সৰ্ব্বসাকুল্যে প্রায় ত্রিশ টাকা খরচ হবে-ক্ৰদ করে দিচ্চি নিয়ে যাও। লোকটা যেন নিঃশ্বাস ফেলে বচলো। এত গম্ভীর ভূমিকার পরে মাত্র ত্রিশটি টাকা খরচের প্রস্তাব সে আশা করে নি । কিন্তু গঙ্গাচরণের উচ্চাশার সীমা পৌছে গিয়েচে, ভাতছালাতেও যাকে স্ত্রীপুত্রসহ অনেক সময় দিনে রাতে একবার মাত্র অন্নাহার করে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েচে, সে এর বেশী চাইতে পারে কি করে ? গঙ্গাচরণ বাড়ীর মধ্যে ঢুকে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করলে। সংসারের কি কি দরকার ? অনঙ্গ-বে বেশি আদায় করতে জানে না। স্বামী-স্ত্রীতে পরামর্শ করে একটা ফর্দ খাড়া করলে, তেমন ব্যয়সাধ্য ফর্দ নয় । অনঙ্গ-বে বললে—তুমি গ৷ বন্ধ করতে পারবে তো ? এতগুলো লোকের প্রাণ নিয়ে খেলা--- গঙ্গাচরণ হেসে বললে—আমি পাঠশালায় ছেলেদের ‘স্বাস্থ্য প্রবেশিকা’ বই পড়াই। তাতে লেখা আছে মহামারীর সময় কি কি করা উচিত অনুচিত। আসলে তাতেই গা বন্ধ হবে । মন্ত্র পড়ে গা বন্ধ করতে হবে না । বাইরে এসে বললে—ফর্দ লিখে নাও—আলোচাল দশ সের, পাকা কলা দশ ছড়া, গাওয়া ঘি আড়াই সের, সন্দেশ আড়াই সের—কাপড় চাই তিনখানা শাড়ী, কস্তাপেড়ে, তিন ভৈরবীর, আর প্রমাণ ধুতিচাদর ভৈরবের—আরও ধরেী—হোমের তাম্রকুণ্ডু । লোকটা ফর্দ নিয়ে চলে গেল । কামদেবপুর গ্রামে যেদিন গঙ্গাচরণ যায়, সেদিনই সেখানে একজন বললে - পণ্ডিত মশাই, চাল বডড আক্রা হবে, কিছু চাল এ সময় কিনে রাখলে ভাল হয় । —কত আক্র হবে ? --তা ধরুন মণে দু টাকা চড়া আশ্চয্যি নয় । কথাটা উপস্থিত কেউই বিশ্বাস করলে না। শাস্তিস্বস্ত্যয়ন এবং গা বন্ধ করার প্রক্রিয়া