পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै९8 বিভূতি-রচনাবলী —হোক গে, আমাদের তো অৰ্দ্ধেক জিনিস কিনে খেতে হয় না । তবে চালটা যদি বেড়ে যায়— —সেই কথাই তো ভাবচি— সেদিন বিকেলে বিশ্বাস মশায়ের বাড়ী বসে এই সব কথার আলোচনা হচ্ছিল। বিশ্বাস মশায় বললেন—আমাদের ভাবনা কি ? ঘরে আমার দু'গোলা ধান বোঝাই। দেখা যাবে এর পরে } বৃদ্ধ নবদ্বীপ ঘোষাল বললে—এ সব হ্যাঙ্গামা কতদিনে মিটবে ঠাকুর মশাই ? শুনচি নাকি কি একটা পুর জারমান নিয়ে নিয়েচে ? বিশ্বাস মশায় বললে—সিঙ্গাপুর— নবদ্বীপ বলে—সে কোন জেলা আমাদের এই যশোর, না খুলনে ? মামুদপুরের কাছে ? বিশ্বাস মশার হেসে বললেন—যশোরও না, খুলনেও না। সে হোল সমুদুরের ধারে। বোধ হয় পুরীর কাছে, মেদিনীপুর জেলা। তাই না পণ্ডিত মশাই ? গঙ্গাচরণ ভাল জানে না, কিন্তু এদের সামনে অজ্ঞতাটা দেখানে যুক্তিযুক্ত নয়। সুতরাং সে বললে—স্থ্যা। একটু দূরে—পশ্চিম দিকে। ঠিক কাছে নয়। নবদ্বীপ বললে—পুরীর কাছে ? অামার মা একবার পুরী গিয়েছিলেন। পুরী, সাক্ষীগোপাল, ভুবনেশ্বর। সে বুঝি মেদিনীপুর জেলা ? বিশ্বাস মশায় বললেন—হঁ্যা । ভৌগোলিক আলোচনা শেষ হলে যে যার বাড়ীর দিকে চলে গেল । গঙ্গাচরণ পাঠশালায় বসে পরদিন ছেলেদের জিজ্ঞেস করলে-এই সিঙ্গাপুর কোথায় জানিস ? কেউ বলতে পারলে না, কেউ নামই শোনে নি । গঙ্গাচরণ নিজের ছেলের দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে বললে—হাৰু, সিঙ্গাপুর কোথায় ? হাবু দাডিয়ে উঠে সগৰ্ব্বে বললে—পুরীর কাছে, মেদিনীপুর জেলায়। পাঠশালার অন্তান্ত ছেলেরা ঈর্ষামিশ্রিত প্রশংসার দৃষ্টিতে হাবুর দিকে চেয়ে রইল। বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে কতকগুলি আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলে গঙ্গাচরণ বাজারের জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে। প্রত্যেক জিনিসের দাম ক্রমশ: চড়ে যাচ্চে । কিন্তু তা যাক গে, সেদিন হাটে একটা ঘটনা দেখে শুধু গঙ্গাচরণ নয়, হাটের সব লোকই অবাক হয়ে গেল। ঘটনাটা অতি সামান্ত। ইয়াসিন বিশ্বাসের বড় গোলদারি দোকান। তাতে কেরোসিন তেল আনতে গিয়ে অনেকে শুধু হাতে ফিরে গেল। তেল নাকি নেই। গঙ্গাচরণের বিশ্বাস হোল না কথাটা । সে নিজেও তেল নেবে। তেলের বোতল হাতে