পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ૨૨૭ —ঠিক ঠিক ! –তাই ভাবলাম যদি পরামর্শ করতে হয় তবে ভাস্কার ওখানে যাই । বাজে লোকের সঙ্গে পরামর্শ করে কি হবে ? তুমি যা বুদ্ধি দিতে পারবে, চাষাভুষো লোকের কাছ থেকে সে পরামর্শ পাবো না । যুদ্ধের খবর কি ? —জাপানীরা সিঙ্গীপুর নিয়ে নিয়েচে । —শুধু সিঙ্গাপুর কেন ? ব্রহ্মদেশও নিয়ে নিরেচে। জানো না সে খবর? —ন—ইয়ে—শুনি নি তো ? ব্রহ্মদেশ ? সে তো— —যেখান থেকে রেঙ্গুন চাল আসে রে ভায়া। ওই যে সস্তা, মোটা মোট আলো চাল সিদ্ধও আছে, তবে আমি আতপ চালটাই খাই । এ আবার এক নতুন খবর বটে। কাল বিশ্বাস মশায়ের চণ্ডীমণ্ডপে বসে গল্প করবার একটা জিনিস পাওয়া গেল বটে। উঃ, এ খবরটা সে এত দিন জানে না ? কেউ তো বলেও নি। জানেই বা কে এ অঙ্গ চাষা-গাঁয়ে ? তবে গঙ্গাচরণের কাছে সবটাই ধোয়া ধোয়া । রেঙ্গুন বা ব্ৰহ্মদেশ যে ঠিক কোন দিকে তা সে জানে না। পুর্ব বা দক্ষিণ দিকে কোন জায়গায়। অনেক দুর। পর দিন দুপুর বেলাতেও দুর্গ পণ্ডিত এখানেই আহার করলে। অনঙ্গ-বে তার জন্ত দু’তিন রকমের তরকারি রান্না করলে। খেতে ভালবাসে, ব্রাহ্মণ অতিথি। তাদের চেয়ে অনেক গরীব । অনঙ্গ-বেী হাবুকে সকালে উঠেই বলেচে—একটা মোচা নিয়ে আয় তো তোর সরাদের বাগান থেকে। স্ত্রীকে মোচ কুটতে দেখে গঙ্গাচরণ বললে—আজি যে অতিথি সৎকারের খুব বহর দেখচি— —ভারি তো। একটু মোচার ঘন্ট রাধবে, আর একটু মুক্ত নি— —বেশ বেশ । অতিথির দোহাই দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও হয়ে যাবে। —হঁ্য গা, পণ্ডিত মশাই বড় গরীব, না ? দেখে বড় কষ্ট হয় । কি রকম কাপড় পরে এয়েচে, পারে জুতো নেই। —ত অবস্থা ভালো হোলে কি সাত টাকা মাইনেতে পড়ে থাকে পাঠশালায়। আজ ওকে একটু ভালো করে খাওয়াও । —একটু দুধ যোগাড় করে দেবে ? —দেখি যদি নিবারণ ঘোষের বাড়ীতে মেলে। ওটা কাচকলার মোচা নয় তো তাহলে কিন্তু এত তেতো হবে যে মুখে দেওয়া যাবে না তরকারি। —না গো, এ কাটালি কলার মোচা। আমাকে তুমি আমার কাজ শেখাতে এসো না বলচি ।