পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩e বিভূতি-রচনাবলী দুপুর বেলা দুর্গ পণ্ডিত খেতে এসে সপ্রশংস বিশ্বরের দৃষ্টিতে পাতের দিকে চেয়ে বললে— এ যে রীতিমত ভোজের আয়োজন করেছেন দেখচি ? আহ, বৌমা সাক্ষাৎ লক্ষ্মী। এত সব রোধেচেন বসে বসে ? ওমা, কোথায় গেলে গো মা ? অনঙ্গ-বে। ঘরে ঢুকে সকুষ্ঠিত সলজ্জভাবে মুখ নীচু করে রইল। দুর্গা পণ্ডিত ভাল করে মোচার ঘণ্ট দিয়ে অনেকগুলে ভাত মেখে গোগ্রাসে খেতে খেতে বললে—সত্যি, এমন তৃপ্তির সঙ্গে কত কাল থাই নি। গঙ্গাচরণের মনে হোল দুর্গ পণ্ডিত কিছুমাত্র বাড়িয়ে বলচে না। ওর স্বরে কপট ভদ্রতা নেই। সত্যি কথাই বলচে ও, এমন কি অনেক দিন পরে ও যেন আজ পেট ভরে দুটি ভাত খেতে পেলে । অনঙ্গ-বেী বললে—ও হাৰু, বল আর কি দেবো ? মোচার ঘণ্ট আর একটু আনি ? পরিশেষে ঘন জাল দেওয়া এক বাটি দুধ আর নতুন আখের গুড়। দুর্গ পণ্ডিত সত্যিই অভিভূত হয়ে পড়েচে, খাওয়ার সময় ওর চোখ দু'টো যেন কেমন ধরনের চক্চক্ করচে। শীর্ণ চেহারা শুধু বোধ হয় না খেয়ে খেয়ে। অনঙ্গ-বেয়ের মনে মমতা জন্মালো। তাদের যদি অবস্থা থাকতে দেবার, ইচ্ছে হয় রোজ ওই অনাহার শীর্ণ দরিদ্র পণ্ডিত মশাইয়ের পাতে এমনিতর নানা ব্যঞ্জন সাজিয়ে খেতে দেয় । —আসি বেীমা, আপনাদের যত্বের কথা ভোলবো না কখনো । বাড়ী গিয়ে মনে রাখবো । অনঙ্গ-বেয়ের চোখ দু'টি অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। —যদি কখনো না খেয়ে বিপদে পড়ি, তুমি একটু ঠাই দিও মা অন্নপূর্ণ। বড় গরীব অামি । দুর্গ পণ্ডিতের অপশ্ৰিয়মাণ ক্ষীণদেহ আম শিমূলের বনের ছায়ায় ছায়ায় দূর থেকে দূরান্তরে গিয়ে পড়লো অনঙ্গ-বেয়ের স্নেহ-দৃষ্টির সম্মুখে। সেদিন এক বিপদ । রাধিকানগরের বাজারে পরদিন বহুলোকের সামনে পাচু কুণ্ডুর চালের দোকান লুঠ হোল। দিনমানে এমন ধরনের ব্যাপার এ সব অঞ্চলে কখনো ঘটে নি। গঙ্গাচরণও সেখানে দাড়িয়ে। একটা বটতলায় বড় আটচালাওয়ালা দোকানটা। প্রথমে লোকে সবাই এলো চাল কিনতে, তারপর কিসে যে কি হোল গঙ্গাচরণ জানে না, হঠাৎ দেখা গেল যে দোকানের চারিপাশে একটা হৈচৈ গোলমাল। মেলা লোক দোকানে ঢুকচে আর বেরুচ্চে। ধামা ও থলে হাতে বহুলোক মাঠ ভেঙে বাওড়ের ধীরে-ধারের পথে পড়ে ছুটচে। সন্ধ্যার দেরি নেই বেশি, সূৰ্য্যদেব পাটে বসে-বসে। গাছের মগডালে রাঙা রোদ । একজন কে বললে—উ, দোকানটা কি করেই লুঠ হচ্চে। গঙ্গাচরণও গিয়েছিল চাল কিনতে । হাতে তার চটের থলে। কিন্তু দোকানে