পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭8 বিভূতি-রচনাবলী — কাল হবে ? —কাল হবে না। সকালে উঠেই চাল যোগাড কবে । রাতটা টেনেটুনে হয়ে গেল। —সেই বিশ্বাস মশায়ের দরুন ধানের চাল । -छ्रे । অনঙ্গ-বেী স্বামী-পুত্রকে পেট ভবে থাইষে সে রাতে এক ঘটি জল আর একটু গুড খেয়ে উপোস করে রইলো। দিন পনেরো কেটে গেল । গ্রামে গ্রামে লোকে একটু সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেচে। চাল পাওয়া বড় কঠিন হয়ে পডেচে। রাধিকানগরের হাটে, যেখানে আগে বিশ-ত্রিশখানা গ্রামের চাষীদের মেয়েবা টেকি ভানা চাল নিয়ে আসতো, সেখানে আজকাল সাত-আট জন স্ত্রীলোক মাত্র দেখা যায় । তাও চাল পাওয়া যায় না। বড়তলার মোডে অর্ণব ওদিকে সামটা বিলের ধারে ক্রেতার দল ভিড পাকিয়ে দাডিয়ে আছে, সেখান থেকে চাল কাডাকাডি করে নিয়ে যায়। হাঁটুরে লোকের চাল বড় একটা পায় না। আজ ছ হাট আদৌ চাল না পেষে গঙ্গাচরণ সতর্ক হয়ে এসে সামটা বিলের ধারে দাডিয়েচে, একটা বড় জিউলি গাছের ছায়ায়। সঙ্গে আরও চার-পাচ জন লোক আছে বিভিন্ন গ্রামের। বেলা আডাইটে থেকে তিনটের মধ্যে। রোদ খুব চড়া। কয়রা গ্রামের নবীন পাড়ই বলচে-বাবাঠাকুর, আমরা তো ভাত মা পেয়ে থাকতি পারি নে, আজি তিন দিন ঘবে চাল নেই। গঙ্গাচরণ বললে—আমার ঘরে আজ দু'দিন চাল নেই। আর একজন বললে—আমাদের দুদিন ভাত পাওয়া হয় নি। নবীন পাড়ই বললে—কি খেলে ? —কি আর থাবো ? ভাগ্যিস মাগনর দুটো চিডে কুটে রেখেছিল সেই বোশেখ মাসে, তাই দু’টো করে খাওয়া হচ্ছে । ছেলেপিলে তো আর শোনবে না, তারা ভরপেট খায়, আমরা খাই অাধপেট । —তা চিডের সেরও দেখতি দেখতি হয়ে গেল বারো আনা, যা ছিল ছ' আনা । —একি বিশ্বেস করতি পারা যায় ? কখনো কেউ দেখেচে না শুনেচে যে চিডের সের বারো আনা হবে ? গঙ্গাচরণ বললে—কখনো কি কেউ শুনেচে যে চালের মণ বোল টাকা হবে ? নবীন পাড়ই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। সে জোয়ান মানুষ যদিও তার বয়েস ঠেকেচে পঞ্চাশের কোঠায়, যেমন বুকের ছাতি, তেমনি বাহুর পেশী। ভূতের মত পরিশ্রম করেও যদি আধপেট খেয়ে থাকতে হয়, তবে আর বেঁচে মুখ কি ? আজি দু-তিন দিন তাই জুটেচে ওর ভাগ্যে।