পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ૨8૭ সঙ্গে সঙ্গে আরও পাঁচ-ছ'জন লোক ওই এক কথাই বললে। ধান দিতে হবে, না দিলে তাদের পরিবারে অনাহার শুরু হবে। বিশ্বাস মশাই বললেন–নিয়ে যাও গোলা থেকে। যা আছে, দু-পাচ আড়ি করে এক একজনের হবে এখন। যতক্ষণ আমার আছে, ততক্ষণ তোমাদের দিয়ে তো যাই, তারপর যা হয় । গঙ্গাচরণও ধানের জন্যে দরবার করতে গিয়েছিল । তাকে বিশ্বেস মশায় বললেন— আপনি ব্রাহ্মণ মানুষ। আপনাকে কৰ্জ হিসেবে ধান আর কি দেবো । পাচ আড়ি ধান নিয়ে যান। কিন্তু এই শেষ, আর আমার গোলার ধান নেই। গঙ্গাচরণ বিস্মিত হোল বিশ্বাস মশায়ের কথায় । যার গোলা ভৰ্ত্তি ধান, মাত্র এই কয় জল লোককে সামান্ত কিছু ধান দিয়ে তার গোলা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে, এ কেমন কথা হোল ? পথে তাকে হীরু কপোলী গোপনে বললে—বিশ্বেস মশায় ধান সব লুকিয়ে সরিয়ে ফেলে দিয়েচে পণ্ডিত মশাই। পাছে মোদের দিতি হয় সেই ভয়ে । দু পৌটি ধান ধরে হাতীর মত গোলা—ধান নেই কি রকম ? —তোমরা তো ধান নিলে, কি রকম দেখলে গোলায় ? —গোলা সাবাড় পণ্ডিত মশাই, নিজের চোকে দেকি এলাম। এক দানা নেই ওর মধ্যি । —তাই তো ! —এবার এই ধান কটা ফুরুলি না খেয়ে মরতি হবে— —কেন ভাদ্র মাসের দশ বারে তারিখের মধ্যে আউশ ধান পেকে উঠচে । ভাবনা চলে যাবে তখন । —ত কি হয় পণ্ডিত মশাই ? নতুন ধানের চাল খেলি সদ্য কলেরা। দেখবেন তাই লোকে খাবে পেটের জালায় আর পট, পট, মরবে। ও চাল কি এখন খাওয়া যাবে—না পেটে সহি হবে ? ও খেতি পারা যাবে কাৰ্ত্তিক অভ্রাণ মাসের দিকি । —তবে উপায় কি হবে লোকের ? —এবার যে রকমডা দেখছি, না খেয়ে লোক মরবে। কথাটা গঙ্গাচরণের বিশ্বাস হোল না । না খেয়ে আবার লোক মরে ? কখনো দেখা যায় নি কেউ না খেয়ে মরেচে। জুটে যায়ই কোনে-না-কোনো উপারে। যে দেশে এত খাবার জিনিস, সে দেশে লোকে না থেয়ে মরবে ? —অনঙ্গ-বেী বললে—ও কটা ধান আমি নিজেই ভেনে কুটে নেবো টেকিতে। ওর জন্তে আর কারো খোশমোদ করতে হবে না। কিন্তু ওতে কদিন চলবে ? —তাই তো আমিও ভাবচি । —আমি একটা কথা ভাবচি। অন্ত লোকের চাল কেন আমি ভেনে দেই না ? বানি পাবে দু'কাঠ করে চাল মণে ।