পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ஆக ச এত ছিল না । দু'দিনে ষোল টাকা থেকে উঠলে চব্বিশ টাকা এক মণ চালের দর—তাও এই মোটা, গুমো, মানুষের অখাদ্য আউশ চালের ! গঙ্গাচরণের সারা শরীরটা যেন বিম ঝিম করে উঠলে । কি করে সে চালাবে ? নিজেদের ধানের ক্ষেত নেই। চব্বিশ টাকা মণের চাল সে কিনে খাওয়াতে পারবে ক’দিন, বারো টাকা যার মাসিক আয় ? অনঙ্গ-বেী না থেয়ে মরবে ? হাৰু পটল না খেয়ে-না, আর সে ভাবতে পারে না । গঙ্গাচরণ চাল নিয়ে বাড়ী ফিরবার পথে দেখলে ধামা কাঠ হাতে আরও অনেকে হাটের দিকে ছুটেচে চালের চেষ্টায়। অনেকে ওকে জিজ্ঞেস করে, চাল কনে পালেন ও পণ্ডিত মশাই ? কি দর? —চব্বিশ টাকা । —মোটা আশ চাল চব্বিশ ? বলেন কি পণ্ডিত মশাই ? —দেখ গে যাও হাটে গিয়ে । বৃদ্ধ দীমু নদী একটা ধামা হাতে খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটচে। দীক্ষ নদী বাড়ীতে বসে সোনা-রুপোর কাজ করে অর্থাৎ গহনা গড়ে । সোনার কাজ তত বেশি নয়, চাষা-মহলে গহনার কাজে সোনার চেয়ে রুপোর ব্যবহারই বেশি। কিন্তু এই দুৰ্দ্দিনে গহনা কে গড়ায়, কাজেই দীক্ষর ব্যবসা অচল। দুটি বিধবা ভাই-বে, বৃদ্ধ মাতা ও কয়েকটি শিশুসন্তান, তৃতীয় পক্ষের তরুণী ভাৰ্য্যা তার ঘাড়ে । দীকু বললে—পণ্ডিত মশায়, চাল পাবো ? —ছুটে যাও। বডড ভিড় । —ছুটি বা কোথেকে, পারে বাত হয়ে কষ্ট পাচ্চি বডড। দু'বেলা খাওয়া হয় নি— —বল কি ? —সত্যি বলচি পণ্ডিত মশাই। বামুন দেবতা, এই অবেলায় কি মিছে কথা বলে নরকগামী হবে ? দীমু খোড়াতে খোড়াতে সজোরে প্রস্থান করলে। গঙ্গাচরণ বাড়ী ফিরতে ফিরতেই কত লোক শুধু হাতেই হাট থেকে ফিরচে দেখা গেল। সাগরতলার কৰ্ম্মকারদের বাড়ীতে একটু বসে তামাক খাচ্ছিল, এমন সময় দু-চার জন লোক সেখানে এসে জুটলো গল্প করতে । একজন বললে—নরহরিপুরের হাটে চাল পাওয়া গেল না, আর কোথায় পাওয়া যাবে বলুন ! আর একজন বললে—লোকও জড়ো হয়েচে হাটে দেখুন গে। এক কাঠা চাল নেই।. কেউ তিন দিন, কেউ পাচ দিন না খেয়ে আছে। আমারই বাড়ীতে দুদিন ভাত খায় নি কেউ । গঙ্গাচরণ বললে—আটা ময়দা নিয়ে যে যাবে, তাও নেই। —বস্তাপচা আটা আছে দু-এক দোকানে, বারো আনা সের। কে খাবে?