পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૯8 বিভূতি-রচনাবলী অনঙ্গ-বে কি ভেবে বললে—একটু দাড়া। এসেচিস যখন তখন নিয়ে যা এক খুঁচি চাল । ওতে আমাদের কতদিনের সাশ্রয় বা হোতো ? কাপালী-বোঁ চাল আঁচল পেতে নিয়ে বললে—এক জায়গায় কচুর শাক আছে তুলতে যাবে বামুন-দিদি ? গেরামে তে কচুর শাক নেই—যে যেখান থেকে পারচে তুলে নিয়ে যাচ্চে। গাঙের ধারে এক জায়গায় সন্ধান করিচি, ঢের কচুর শাক হয়ে আছে। দু'জনে চলো চুপি চুপি তুলে আনি । , —চল, আজ দুপুরে যাবো। চাল তো নেই। যা দেখচি ওই খেয়েই থাকতে হবে দুদিন পরে । কাপালী-বোঁ হেসে বুড়ো আঙুল তুলে নাচিয়ে বললে—লবডঙ্কা! তাই বা কোথায় পাচ্ছ বামুন-দিদি ? কাওরা পাড়ার মাগী-মিন্সে এসে গাঙের ধারের যত শুধনি শাক, কলমি শাক, হেলেঞ্চ শাক, তুলে উজোড় করে নিয়ে যাচ্চে দিনরাত। গিয়ে স্থাখো গো কোথাও নেই। আমি কি খোজ করি নি বামুন-দিদি ? ওই খেয়ে আজ দু'দিন বেঁচে আছি—ওই সব শাক আর ছোলা সেদ্ধ। তোমার কাছে মিথ্যে কথা বলে বড়াই করে কি করবো ? বিশ্বাস মশায়ের বাড়ী মিটিং বসেচে। বৰ্ত্তমান সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্তেই মিটিং, তবে কীপালী-পীড়ার লোক ছাড়া অন্ত কোনো লোক এতে উপস্থিত নেই । ক্ষেত্র কাপালী বললে—এখন ধান আমাদের দেবেন কিনা বলুন বিশ্বেস মশায়। বিশ্বাস মশায় অনেকক্ষণ থেকে সেই একই কথা বলচেন—ধান নেই, তার দেবো কি। আমার গোলা খুজে দ্যাখে । অধর কপালী বললে—আমাদের পাড়াটা আপনি কর্জ দিয়ে বেচিয়ে রাখুন। আসচে বারে আপনার ধার এক দানাও বাকি রাখবো না । বিশ্বাস মশায়ের বঁা-দিকে গঙ্গাচরণ অনেকক্ষণ থেকে বসে আছে । সে এসেছিল ধানচাল সম্বন্ধে একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না বিশ্বাস মশায়ের সাহায্যে, সেই চেষ্টায় । এত বড় মিটিংএর মধ্যে এসে পড়বে তা সে ভাবে নি। সে চুপ করে বসেই আছে। • হঠাৎ তার দিকে ফিরেই বিশ্বাস মশার বললেন-পণ্ডিত মশাই, আপনি এই নিন গোলার চাৰি। এদের গিয়ে খুলে দেখান ওতে কি আছে— বিশ্বাস মশার চাবিটা গঙ্গাচরণের সামনে ছুড়ে ফেলে দিতেই ক্ষেত্র কাপালী বলে উঠলো , —গোলা দেখতে হবে না । আমরা জানি ও গোলাতে আপনার ধান নেই। চটে উঠে বিশ্বাস মশায় বললেন—তবে কোথায় আছে ? —আপনি ধান লুকিয়ে রেখেছেন বাড়ীতে । —তুমি দেখেচ ? —দেখতে হবে না, আমরা জানি ।