পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত R©☾ কথা শেষ করে ক্ষেত্র কপিালী মিটিং ছেড়ে উঠে চলে গেল। অধর কাপালী অকুনয়ের সুরে বললে—শুমুন, বিশ্বেস মশার, আপনি পাড়ার মা-বাপ। এ বিপদে যদি আপনি না বাচান, তবে ছেলেপিলে নিই কোথায় দাড়াই বলুন দিকি ? অমন করবেন না। ধানের ব্যবস্থা আজ করে দিতেই হবে আপনাকে । বিশ্বাস মশায় দাত থিচিয়ে বললেন—অমনি বলে সবাই! তুমি তো আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে দিব্যি নিশ্চিন্দি হলে—তারপর ঠ্যালা সামলায় কে শুনি ? ধান আমার নেই। —একটু দয়া করুন—এট,আমাদের দিকি চান। আজ ছুদিন বাড়ীতে একটা চালের দান কারো পেটে যাই নি, সত্যি বলচি । —বেশ, তুমি আধ কাঠা চাল ঘর থেকে নিয়ে যাও না, তাতে কি ? না হয় আমি এক মুঠো কম থাবো। সে কথা তো বললিই হয়, কি বলেন ঠাকুর মশাই ? গঙ্গাচরণ চুপ করে রইল, এ কথায় সায় দিলে পাডার লোকে তার ওপর চটে যাবে, সবাইকে নিয়ে বাস করতে হবে যখন, কাউকে সে চটাতে চার না । সভা বেশিক্ষণ চললো না । বিশ্বাস মশায়ের কাছে যারা দরবার করতে এসেছিল, সবাই বুঝলে এখানে ডাল গলানো শক্ত। ষে যার বাড়ী চলে গেল। গঙ্গাচরণ সুযোগ পেয়ে বললে—বিশ্বাস মশায়, আমি কি না খেয়ে মরবো ? —কেন ? —বাজারে চাল অমিল। আর দুদিন পরে উপোস শুরু হবে। কি করি পরামর্শ দিন । —আমার বাড়ী থেকে দু’কাঠা চাল নিয়ে যাবেন। —ত দিয়ে ক'দিন চলবে বলুন। —কেন ? —আমার বাড়ীর পুস্কি দু'তিন জন। ও দু'কাঠা চাল নিয়ে কদিন খাবো ? আমার স্থায়ী একটা ব্যবস্থা না করলে এই বিপদের নে আমি কোথায় যাই ? পাঠশালা চালাই কি খেয়ে ? —আমার ধানচাল থাকতো তো বলতে পারা যেতো কিন্তু আমার তা নেই। আজি দু'কাঠা চাল নিয়ে যান দিচ্চি— গঙ্গাচরণ চাল নিয়ে চলে গেল । সে রাত্রে বিশ্বাস মশায় আহারাদির পর পুকুরপাড় থেকে গরু আনতে গিয়েছেন, কারণ , সেখানেই তার গোয়াল—এমন সময় দুজন লোককে গাছের আড়ালে দেখে বলে উঠলেন— ওখানে কে ? —তোর বাবাসঙ্গে সঙ্গে তারা এসে বিশ্বাস মশায়ের মাথায় সজোরে এক লাঠি বসিয়ে দিলে। এর পর ওরা তাকে পুকুরপাড়ের বাবলা গাছের সঙ্গে মোটা দড়া দিয়ে বেঁধে ফেললে । বিশ্বাস মশায়ের জ্ঞান রইল না বেশিক্ষণ, মাথার যন্ত্রণায় ও রক্তপাতে।