পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ૨૮૧ আমি দেবো । বিশ্বাস মশায় বললেন—এখন না । সন্দের পরে। কেউ টের না পায় । গঙ্গাচরণ এ অঞ্চলে কবিরাজিও করে । কিন্তু কবিরাজি এখানে ভাল চলে না—কারণ এখানকার সবার সারকুমার মত। সে এক অদ্ভূত চিকিৎসার প্রণালী। জর যত বেশিই হোক, তাতে স্নানাহারের কোনো বাধা নেই। দু’চার জন সেরেও ওঠে, বেশির ভাগই মরে। তবু ও মতের লোক কখনো ডাক্তার বা কবিরাজ দেখাবে না, মরে গেলেও না । গঙ্গাচরণ কথাটা জানে, তাই বললে—আপনার সেই সারকুমারী মতের ফকির আসবে নাকি ? —না: ৷ সেবার জলজ্যাস্ত নীতিটাকে মেরে ফেললে। আমি ও-মতে আর নেই। —ঠিক তো ? দেখুন, তবে আমি চিকিচ্ছে করি মন দিয়ে। সৌদামিনী বলে উঠলো—আপনি দেখুন ভালো করে। আমি ও মতে আর কাউকে যেতে দেবে না এ বাড়ীতে । চাল নিয়ে যাবেন সন্দের পরে । দিন দুই পরে বিশ্বাস মশার একটু মুস্থ হয়ে উঠলেন। একদিন গঙ্গাচরণ গিয়ে দেখলে বিশ্বাস মশায় বিছানায় উঠে বসে তামাক খাচ্চেন। গঙ্গাচরণ শুনলে, এ গ্রাম থেকে বিশ্বাস মশায় উঠে যাচ্চেন। জিনিসপত্র বাধাছাদা হচ্চে । বাইরে আট-দশখানা গরুর গাড়ীর চাকার দাগ। রাত্রে এই গাড়ীগুলো যাতায়াত করেচে বলেই মনে হয় । গঙ্গাচরণ বুঝতে পারলে বিশ্বাস মশায় মজুদ ধান চাল সব সরিয়ে দিয়েচেন রাতারাতি। গঙ্গাচরণ বললে—কোথায় যাবেন চলে নিজের গা ছেড়ে ? বিশ্বাস মশায় বললেন আপাতোক যাচ্চি গঙ্গানন্দপুর, আমার শ্বশুরবাড়ী। এ গায়ে আর থাকবে না। এ ডাকাতের দেশ। সামান্ত দু’চার মণ ধান চাল কে না ঘরে রাখে বলুন তো পণ্ডিত মশায়। তার জন্তে মানুষ খুন ? আজি ফসকে গিয়েচে, কাল যে খুন করবে না তার ঠিক কি ? না, এ দেশের খুরে নমস্কার বাবা । —আপনার জমিজমা পুকুর এ সবের কি ব্যবস্থা হবে ? —আমার ভাগ্নে দুর্গাপদ মাঝে মাঝে আসবে যাবে। সে দেখাশুনো করবে। আমি আর এমুখে হচ্চি নে কখনো। টেপ রেচে। ভাল কথা, একটা ভাল দিন দেখে দেবেন তো যাবার ? বুধবার সকালবেল বিশ্বাস মশায় সত্যসত্যই জিনিসপত্র সমেত নতুন গা কাপালী-পাড়ার বাস উঠিয়ে চলে গেলেন। অনঙ্গ-বেী শুনে বললে-এই বিপদের দিনে তবুও এই একটা ভরসা ছিল। কোথাও চাল না পাওয়া যায়, ওখানে তৰু পাওয়া যেতো। এবার গায়ের খুব ছৰ্দ্দশা হবে। একদানা খানচাল কারো ঘরে রইল না আর । ভয়ে পড়েই লোকটা চলে গেল। वि. ब्र. ४-४१