পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रै७० বিভূতি-রচনাবলী বলতেই তখুনি সে খুলে দিলে। এক মণ চালই এসে ঘরে উঠলো। রামলাল কপোলী বলে দিলে—চুপি চুপি নিয়ে যাবেন দাদাঠাকুর। সন্ধ্যার অনেক পরে চাল নিয়ে আসতে গিয়ে গঙ্গাচরণ ও তার দুই ছেলে পড়ে গেল নিমাই জেলের সামনে। সে নদীতে যাচ্চে আলোয় মাছ ধরতে । ওদের দেখে বললে—কে ? গঙ্গাচরণ বললে—এই আমরা। —কে পণ্ডিত মশাই ? পেন্নাম হই। কি ওতে ? —ও আছে । —ধান বুঝি—পণ্ডিত মশাই ? -शैं । নিমাই জেলের বিধবা মেয়ে পরদিন ভোর না হতে এসে হাজির ৷ না খেয়ে মারা যাচ্ছে ওরা, দুটো ধান দিতে হবে। অনঙ্গ-বেী মিথ্যে কথা বলতে তেমন পারে না, না ভেবেই বলে বসলো—ধান তো নেই ঘবে, চাল এনেছিলেন কিনে উনি । —তাই দুটো স্থান বামুন-দিদি, না খেরে মরচি। দিতে হোল। ঘবে থাকলে না দিয়ে পাবা যায় না। ফলে দলে দলে এ-পাডা ও-পাডা থেকে লোক আসতে লাগলো। কেউ ভাত দাও, কেউ চাল দাও দুটি। এক মণ চাল দশ দিনে উঠে গেল, মাঝে পডে অনঙ্গ-বেীয়েব শেষ সম্বল কলি দু’গাছা অনন্তেব পথে যাত্রা করলো । ইতিমধ্যে একদিন ভাতছালা থেকে মতি মুচিনী এসে হাজিব। অনঙ্গ-বেী বললে—কি বে মতি ? আয় আয়— মতি গলায় আঁচল দিয়ে দূর থেকে প্রণাম করে বললে–গড করি দিদি-ঠাকরুণ। —কি রকম আছিল ? এ রকম বিচ্ছিরি রোগ কেন ? —ভালো না দিদি-ঠাকরুণ । না খেয়ে খেয়ে এমনি দশা । —তোদের ওখানেও মন্বস্তর ? —বলেন কি দিদি-ঠাকরুণ, অত বড মুচিপাডার মধ্যে লোক নেই। সব পালিয়েচে । —কোথায় ? —যে দিকি দু’ চোক যায়। দিদি-ঠাকরুণ, সাতদিন ভাত খাই নি, শুধু চুনো মাছ ধরতাম আর গেডি-গুগলি । তাও এদানি মেলে না। ভাতছালার সেই বিলির জল ঘোলদই। শুধু দ্যাখে মুচিপাড়া, বাগদিপাডার মেয়ে-ছেলে বেী-ঝি সব সেই একগলা জলে নেমে চুনো মাচ আর গেড়ি-গুগলি ধরচে। সব ফুরিয়ে শেষ হয়ে গেল। আর আধ পোরা মাছও হয় না। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ডাঙায় বসে কাদছে। ওদের মা কাচা গেড়ি-গুগলি তুলে ওদের মুখে দিয়ে কান্না থামিয়ে এসে আবার জলে নেমেচে । কত মরে গেল ওই সব খেয়ে।