পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২৬৩ —কি বললে ? —চাল দেবো আধ কাঠা । –তাইতে তুই— এই পৰ্য্যন্ত বলেই অনঙ্গ-বেী চুপ করে গেল। ওর কাছে এসে ওর হাত ধরে গভীর স্বরে বললে—ছুটকি ? কাপালী-বোঁ চুপ করে রইল। —তুই আমার কাছে গেলি নে কেন ? —তুমি সেদিনও আমার সঙ্গে শাক তুলে নিয়ে গেছলে। তোমার কাছে কিছু ছিল না সেদিন । —যেদিন মতে মুচিনী এল ভাতছালা থেকে ? -ਂ i অনঙ্গ-বৌয়ের চোখ ছলছল করে এল। সে আর কিছু না বলে কীপালী-বৌয়ের ডান হাতখানা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিলে । দুর্গা পণ্ডিত এসে আড়ি হয়ে শুয়ে পড়েছিল ওদের দাওয়ায় । বাড়ীতে কেউ ছিল না, গঙ্গাচরণ পাঠশালায়, ছেলেরা কোথায় বেরিয়েছিল। অনঙ্গ-বেী শাক তুলে বাড়ী ফিরে এসে দেখে প্রমাদ গনলো। আজই দিন বুঝে! শুধু এই শাক ভরসা, দুটাে কটা মোট নাগরা চাল কোথা থেকে উনি ওবেলা এনেছিলেন, তাতে একজনেরও পেট ভরবে না । দুর্গ পণ্ডিত বললেন—এসে মা ! তোমার বাড়ী এলাম। —বক্ষন, বসুন। —তোমাদের সব ভালো ! —এক রকম ওই । আধঘণ্টা পরে দুর্গ পণ্ডিত হাত-পা ধুয়ে মুস্থ ঠাও হয়ে অনঙ্গ-বেয়ের কাছে তার দুঃখের বিবরণ দিতে বসলেন। যেন অনঙ্গ-বেী তার বহুদিনের আপনার জন । অনঙ্গ বললে—তিন দিন থান নি ? বলেন কি ? —আমি তো নয়, বাড়ীসুন্ধ দেউ নয় মা ! বলি না খাওয়ার কষ্ট আর সহ্যি হয় না, আমার মায়ের কাছে যাই । —তা এলেন ভালই করেছেন। অনঙ্গ আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলে আপাতোক বুড়োকে কি দিয়ে একটু জল দেওয়া । যায়। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল পুরোনো দুটো চা পড়ে আছে হাড়ির মধ্যে পুটুলিতে। বললে—একটু চা করে দেবো? . দুর্গ পণ্ডিত খুশির সঙ্গে বলে উঠলো—আহা, তা হোলে তো খুবই ভালো হোল। কতদিন চা পেটে পড়ে নি"।