পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৪ বিভূতি-রচনাবলী অনঙ্গ-বে চিন্তিত মুখে বললে—কিন্তু মুন-চ খেতে হবে। দুধ নেই। —তাই দাও মা । লবণ-চ আমি বড় ভালবাসি। শুধু এক বাটি চুন-চা। তা ছাড়া অনঙ্গ-বেয়ের কিছু দেবার উপায়ও ছিল কি ? রাত্রে গঙ্গাচরণ এসে দুর্গ পণ্ডিতকে দেখে মনে মনে ভারি চটে গেল। স্ত্রীকে বললে— জুটেচে ওটা আবার এসে ? অনঙ্গ-বেী রাগের সুরে বললে—জুটেচে। তা কি হবে এখন ? —চলে যেতে বলতে পারলে না ? কি খেতে দেবে শুনি ? —তুমি আমি দেবার মালিক ? যিনি দেবার তিনিই দেবেন। —ই তিনি তো দিলেন দুবেলা । তাহোলে ওকেও তো তিনি দিলেই পারতেন। তোমার কন্ধে নিয়ে এসে চাপালেন কেন ? —ছি, অমন বলতে নেই তার নামে। তিনি ঠিক জোটবেন। এখানে যে পাঠিয়েচেন, এও তার কাজ। যোগাবেন তিনি। —বেশ, যোগান তবে । দেখি বসে বসে । —নাও, হাত-পা ধুয়ে—এখন মুন-চ থাবে একটু ? দুর্গ পণ্ডিত বেশ শেকড গেডে বসে গেল সেদিন থেকে, মনে হোল গঙ্গাচরণের। মনে মনে বিরক্ত হলেও গঙ্গাচরণ মুখে কিছু বলতে পারে না । দেখতে দেখতে তিন দিন দিব্যি কাটিয়ে দিলে। অনঙ্গ-বেীয়েব আশ্রিত জীব,কোথা থেকে এনে যে ওকে অনঙ্গ-বোঁখাওয়ায়,কেউ বলতেপারেন । সেদিন দুর্গ পণ্ডিতকে বসে সামনের বেড বাধতে দেখে গঙ্গাচরণ বিরক্ত হয়ে বললে— ও কাজ করতে আপনাকে কে বলেচে ? দুর্গ পণ্ডিত থতমত খেয়ে বললে—বসে বসে থাকি, বেডাটা বাধি ভাবলাম । —ন, ও রাখুন। ও আপনাকে করতে হবে না । হাবু বাধবে এখন। —ও ছেলেমানুষ, ও কি পারবে ? —খুব ভাল পারে। আপনার হাতে এখুনি দায়ের কোপ লেগে যাবে। এখন ও রাখুন। দুর্গ পণ্ডিত একটু কুষ্ঠিত হয়েই থাকে। সংসারের এটা-ওটা করবার চেষ্টা করে, তাতে গঙ্গাচরণ আরও চটে যায়। এর মতলবখানা কি, তাহলে এখানেই থেকে যেতে চায় নাকি ? অনঙ্গ-বেী দিব্যি ওকে চা খাওয়াচ্চে, খাবারও যে না খাওয়াচ্চে এমন নয়। স্ত্রীকে কিছু বলতেও সাহস করে না গঙ্গাচরণ । চালের অবস্থা ভীষণ। এর ওর মুখে শুধু শোনা যাচ্চে চাল কোথাও নেই। একদিন সাধু কপালী সন্ধান দিলে, কুলেখালিতে এক গোয়াল-বাড়ীতে কিছু চাল বিক্রি আছে। কথাটা গঙ্গাচরণের বিশ্বাস হোল না। তবুও গরজ বড বালাই, সাধু কাপালী ও সে দুজনে সাত ক্রোশ হেঁটে কুলেখালি গ্রামে উপস্থিত হোল। এদিকে রেল-টেল নেই, বড বাজার