পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ বিভূতি-রচনাবলী —চলুন যাই, বামুনডাঙা-শেরপুর সামনে, তার পরে ঝিকরহাটি। বামুনডাঙা-শেরপুর গ্রামে ঢুকেই ওরা একটা বড় আটচালা ঘর দেখতে পেলে । সাধু কাপালী বললে—চলুন এখানে। ওরা একটু জল তো দেবে। গৃহস্বামী জাতিতে সদগোপ, ওদের যত্ব করে বসালে ; গাছ থেকে ডাব পেডে খেতে দিলে। তারপর একটা বাটিতে খানিকট আখের গুড নিয়ে এল, জল নিয়ে এল। বললে —এবেলা এখানে দুটে রমুই করে খেয়ে যেতে হবে। গঙ্গাচরণ আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে—রমুই ? —ই বাবাঠাকুর। তবে চাল নেই। গঙ্গাচরণ আরও আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে—তবে ? —বাবাঠাকুব চাল তো অনেকদিনই নেই গায়ে । দিন দশেক থেকে কেউ ভাতের মুখ দেখে নি এখানে । —তবে কি রক্ষই করবো ? —বাবাঠাকুর বলতে লজ্জা করে, কলাই-সেদ্ধ খেয়ে সব দিন-গুজরান করচে । বড়-ছোট সবাই । আপনাকেও তাই দেবো। আর লাউ-উণটা চচ্চডি। ভাতের বদলে আজকাল সবাই ওই খাচ্চি এ গায়ে । সাধু কাপালী তাতেই রাজী। সে বেচারী দুদিন ভাত খায় নি—ওর মুখের দিকে চেয়ে গঙ্গাচরণ বললে—বাপু যা আছে বের করে দাও। সেদ্ধ কলাই মুন আর লঙ্কা, তার সঙ্গে বেগুনপোডা । সাধু কাপালী খেয়ে উঠে বললে— উ:, এতও আদেষ্ট্রে ছিল পণ্ডিত মশাই । গঙ্গাচরণ বললে—একটা হদিস পাওয়া গেল, এ জানতাম না সত্যি বলছি । কিন্তু এ খেয়ে পেটে সইবে কদিন তাই ভাবচি। সন্ধ্যার দিকে শুধু হাতে গঙ্গাচরণ বাড়ী ফিরলে, কেবল সাধু কপালী গোটকতক বেগুন নিয়েচে। সাধু গরীব লোক নয়, তার-তরকারি বেচে সে হাটে হাটে তিন-চার টাকা উপার্জন করে, কিন্তু টাকা দিয়েও চাল মিলচে কোথায় ? দুর্গা, অনঙ্গ-বেী ও ছেলেদের কারো খাওয়া হয় নি। ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলে গঙ্গাচরণ। ও নিজে তবুও যা হোক দুটাে কলাই সেদ্ধও খেয়েছে। অনঙ্গ-বেী স্বামীকে খালি হাতে ফিরতে দেখে চালের কথা কিছু জিজ্ঞেসই করলে না। গঙ্গাচরণ হাত-পা ধুয়ে বসলে চা করেও নিয়ে এল। দুর্গ নিজেও নাকি আজ চালের চেষ্টায় বেরিয়েছিল। কোথাও সন্ধান মেলে নি। অনঙ্গ-বেী ওকে বললে—থাবে এখন ? গঙ্গাচরণ কৌতুহলের সঙ্গে খাবার জায়গায় গিয়ে দেখলে থালের একপাশে শুধু তরকারী, ভাত নেই—খানিকটা বেশি করে মিষ্টি কুমড়ে সেদ্ধ, একটু আখের গুড। স্ত্রী যেন অন্নপূর্ণ, এও তো কোথা থেকে জোটাতে হয়েচে ওরই ! গঙ্গাচরণ কিছু ঠিক করতে পারে না ভেবে ভেবে। রোজ রোজ এই খেয়ে মাহৰ কি ধাচে ]