পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭২ বিভূতি-রচনাবলী নিয়ে যখন কথা, তখন জেনো, কাগ পক্ষিতেও একথা টের পাবে না । মাথার ওপর চক্র-স্মৃয্যি নেই ? বাড়ী এসে আলুর ভাগ নিয়ে চলে গেল যে যার ঘরে। গঙ্গাচরণ বেরিয়েছিল চাল যোগাড়ের চেষ্টায় । কিন্তু ন হাটার হাটে ঘোর দাঙ্গা আর লুটপাট হয়ে গিয়েচে–চালের দোকানে। পুলিস এসে অনেক লোককে ধরে নিয়ে গিয়েচে । গঙ্গাচরণ বর্ণনা করে স্ত্রীর কাছে বসে সন্ধ্যার পরে। অনঙ্গ-বেী বললে—এখন উপায় ? —উপবাস । অনঙ্গ-বেী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভাবলে সে উপোস করতে ভয় খায় না, উপোস কি করে নি এর মধ্যে ? কিন্তু এই যে উনি শুকনে মুখে এত দূর থেকে এসেছেন ফিরে, ওঁকে এখন সে কি খেতে দেবে এই মেটে আলু সিদ্ধ ছাড়া ? বাধ্য হয়ে দিতে হোল তাই। শুধু মেটে আলু সিদ্ধ। এক তাল মেটে আলু সিদ্ধ। সবাইকে তাই খেতে হোল। দুর্গ পণ্ডিত সম্প্রতি বাড়ী চলে গিয়েচে। তবুও আলুসেদ্ধ খানিকট বাঁচবে। হাবু খেতে বসে বললে—এ মুখে ভাল লাগে না মা-- অনঙ্গ বললে—এ ছেলের চাল দ্যাথ না ? মুখে ভাল না লাগলে করচি কি ? মতি মুচিনী খেতে এল না, কারণ সে ভাগের ভাগ আলু নিয়ে গিয়েচে, আলাদা করে আলুসেদ্ধ বা আলু পোড়া খেয়েচে । পরদিনও আলু সেদ্ধ চললো । এ কি তাচ্ছিল্যের দ্রব্য ? কত বিপদের সম্মুখীন হয়ে তবে ওইটুকু আলু সংগ্রহ করে আনতে হয়েচে—ছেলের মুখে ভালো লাগে না তো সে কি করবে ? রাত্রিতে অনঙ্গ-বে বললে—হঁ্যাগা, চাল ন পাও, কিছু কলাই আজি আনে। আলু ফুরিয়েচে । —তাই বা কোথা থেকে আনি ? —পরমাণিকদের দোকানে নেই ? —সব সাবাড়। গুদোম সাফ । —কি উপায় ? —কিছু নেই ঘরে ? আলুটা ? —সে আর কতটুকু। কাল ফুরিয়েচে । তবুও তো এবার পণ্ডিত ঠাকুর নেই—মতি নেই —নিজেরাই খেয়েচি । —কাল থেকে কি হবে তাই ভাবচি— —চাল কোথাও নেই ? —আছে। পয়ষটি টাকা মণ, নেবে ? পারবে নিতে ?