পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ९११ গঙ্গাচরণ বললে—সে আমি জানি। তবুও তোমার মুখে শুনবো বলে এসেছিলাম— গঙ্গাচরণ সেখানেই বসে পড়লো। চাল না নিয়ে ফিরবে কেমন করে। বাড়ীর সকলেই আজ দু'দিন থেকে ভাত খায় নি। ছেলেদের মুখের দিকে তাকালে কষ্ট হয়। অন্ত কয়েকজন লোক যারা এসেছিল, তারা একে একে সবাই ফিরে গেল। নিবারণ ঘোষ বাইরের বাড়ী আর ভেতর বাড়ীর মধ্যেকার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কতক্ষণ পরে নিবারণ ঘোষ আবার বাইরে এল। গঙ্গাচরণকে বসে থাকতে দেখে বললে —বাবাঠাকুর কি মনে করে বসে ? চাল ? সে দিতে পারবো না। ঘরে চাল আছে, সে তোমার কাছে অস্বীকার করতে যাচ্চি নে—শেষে কি নরকে পচে মরবো ? কিন্তু সে চাল বিক্রি করলি এরপর বাচ-কাচ না খেয়ে মরবে যে ! —কত চাল আছে ? —দু মণ । -ट्रैिक ? —না ঠাকুরমশাই মিথ্যে বলবো না । আর কিছু বেশী আছে। কিন্তু সে হাতছাড়া করলি বাড়ীযুদ্ধ না খেয়ে মরবে। ট্যাক নিয়ে কি ধুয়ে থাবো ? ও জিনিস পয়সা দিলি মেলবে না । গঙ্গাচরণ উঠবার উদ্যোগ করছে দেখে নিবারণ হাত জোড় করে বললে—একটা কথা বলি বাবাঠাকুর। ব্রাহ্মণ মানুষ, এত দূর এয়েচেন চালির তেষ্টায়। আমি চাল দিচ্চি, আপনি আমার বাড়ীতে দুটে রান্না করে থান। রমুই চড়িয়ে দিন গোয়ালঘরে। মাছ পুকুর থেকে ধরিয়ে দিচ্চি, মাছের ঝোল ভাত আর গরুর দুধ আছে ঘরে। এক পয়সা দিতি হবে না আপনার । গঙ্গাচরণ বললে—না, তা কি করে হয় ? বাড়ীতে কেউ খায় নি আজ দুদিন । ছেলেপিলে রয়েছে, তা হয় না। তুমি আমাকে রান্নার জন্তে তো চাল দিতেই, আর দুটাে বেশী করে দাও। আমি দাম দিয়ে নেবো । ষাট টাকা করেই মণ দেবে, কিছু বেশি না झग्न नfe ! নিবারণ কিছুতেই রাজী হোল না। তার ওপর রাগ করা যায় না, প্রতি কথাতেই সে হাত জোড় করে, এখানে বসে খাওয়ার নিমন্ত্ৰণ তো করে রেখেচেই। গঙ্গাচরণ চলে আসছে, নিবারণ এসে পথের ওপরে আবার তাকে হাত জোড় করে রান্না করে খাওয়ার অনুরোধ জানালে। গঙ্গাচরণ রাগ করে বললে—আমি কি তোমার বাড়ী খেতে এসেছি ? যাও যাও—. ওকথা বলে না— - কিন্তু গঙ্গাচরণের মনের মধ্যে আর সে জোর নেই। হঠাৎ তার মনের চক্ষে ভেসে উঠেছে, দিব্যি হিঙের টোপ টোপাবড়ি ভাসচে মাছের ঝোলে, আলু বেগুন, বড় বড় চিংড়ি মাছ আধ-ভাসা অবস্থায় দেখা যাচ্চে বাটির ওপরে। . ভাতে সেই মাছের ঝোল মাখা হয়েচে।