পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૧ઝ বিভূতি-রচনাবলী কঁাচ ঝাল একটা বেশ করে মের্থে - নিবারণ বললে—আসুন, চলুন। আমার একথা আপনাকে রাখতেই হবে। সে শোনবো না আমি। দুপুর বেলায় না খেয়ে বাড়ী থেকে ফিরে যাবেন ? হাৰু ভাত খায় নি আজ দু'দিন। অনঙ্গ-বোঁ খায় নি দু'দিনেরও বেশি। ও যে কি খায়-নী-খায় গঙ্গাচরণ তার খবর রাখে না। নিজে না খেয়েও সবাইকে জুগিয়ে বেড়ায় । তার খাওয়া কি এখানে উচিত হবে ? গঙ্গাচরণ নিবারণকে বললে, আচ্ছা যদি খাই, তবে এক কাঠা চাল দেবে ? —না বাবাঠাকুর। মিথ্যে বলে কি হবে । চাল হাতছাড়া করবো না । আপনি এক এখানে বলে অtধ কাঠা চাল রোধে খান তা দেবো । —তোমার জেদ দেখছি কম নয়। —এই আকালে এমনি করেছে। ভয় ঢুকে গিয়েছে যে সবারই। —চাল আর জোগাড করতে পারবে না ? —কোথা থেকে করবো বলুন ! কোন মহাজনের ঘরে ধান নেই। বাজারে এক দানা চাল আসে না । আমাদের গেরামের পেছনে একটা বিল আছে জানেন তো ? দাসপাডার বিল তার নাম। এখন এই তো বেলা হয়েছে, গিয়ে দেখুন সেখানে ত্রিশ-চল্লিশ জন মেয়েমানুষ জুটেছে এতক্ষণ। জলে পাকের মধ্যি নেমে পদ্ম গাছের মূল তুলছে, গেড়ি-গুগলি তুলছে—জল-বাঝির পাতা পৰ্য্যস্ত বাদ দেয় না । --বল কি ? —এই যাবার সময় দেখবেন সত্যি না মিথ্যে। যত বেলা হবে, তত লোক বাড়বে, বিলির জল লোকের পারে পারে ঘোল দই হয়ে যাবে কাদা ঘুলিয়ে। এক-একজন কাদামাখা পেত্নীর মত চেহারা হয়েছে—তবুও সেই কাদা জলে ডুব দিয়ে পদ্মের মূল, গেডি গুগলি এসব খুজে বেড়াচ্চে । চেহারা দেখলি ভয় হয়। তাও কি পাচ্চে বাবাঠাকুর ? বিল তো আর অফুরন্ত নয়। যা ছিল, তিন দিনের মধ্যে প্রায় সাবাড় হয়ে গিয়েচে। এখন মনকে চোখ ঠারা । —তবে যাচ্ছে কেন ? * —আর তো কোথাও কিছু খাবার নেই। যদি তবুও বিলের মধ্যি খুঁজলি পাওয়া যায়। ভেবে দেখুন বাবাঠাকুর, আপনাকে যদি চাল বেচি, তবে একদিন আমার বাড়ীর বি-বউদের অমনি করে পাক মেখে বিলের জলে নামিতে হবে দুটাে গেড়ি-গুগলি ধরে খাবার জন্তি । চলুন, বাবাঠাকুর, আমুন, দুটাে খেয়ে যান। পেট ভৰ্ত্তি চাল দেবো এখন। গঙ্গাচরণ ফিরলো । মাছের ঝোল ভাত—গেড়ি-গুগলি সেদ্ধ নয়। এখনো এ গ্রামের এ দিনেও ভাত খেতে পাওয়া যাচ্চে । এর পরে আর পাওয়া যাবে কি না কে জানে। গোয়ালঘর নিকিয়ে পুছে দিলে নিবারণের বিধবা বড়মেয়ে ক্ষ্যস্তমণি। কাঠ নিয়ে এসে এক পাশে রাখলে । গঙ্গাচরণ পুকুরের জলে স্নান করে আসতেই ক্ষ্যাস্তমণি তসরের