পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী واساجد কিন্তু গঙ্গাচরণের বড় লোভ হোল একখানা থালায় সাজানো বড় বড় জোড়া সন্দেশ দেখে । তার নিজের জন্তে নয়, অনঙ্গ-বোঁ কতকাল কোন জিনিস খায় নি। ওর জন্তে যদি দুখানাও নিয়ে যাওয়া যেতো। ক্ষেত্র কণপালী গরম সিঙাড়া খেয়ে জল খেয়ে পানের দোকানে পান কিনতে গিয়েচে–ও তখন ময়রাকে বললে—তোমার ঐ জোড় সন্দেশের দাম কত ? --চার অানা করে । —দু থানা চার আনা ? —সেকাল নেই ঠাকুর । একখানার দাম চার আনা । গঙ্গাচরণ অবাক হোল। ওই জোড়া সন্দেশের একখানির দাম ছিল এক আনা । সেই জায়গায় একেবারে চার আনা ! সে কি কেনা ওর চলবে ? অসম্ভব । হাতে অত পয়সা নেই। গঙ্গাচরণ বার বার জোড়া সন্দেশের দিকে চাইতে লাগলো। সুন্দর সন্দেশ গড়েচে । কারিগর ভালো । ঠোঙা থেকে বের করেই যদি অনঙ্গর হাতে দেওয়া যেতো ! —ওগো, দ্যাথো কি এনেচি— —কি গা ? —কেমন জোড়া সন্দেশ, দেখেচ ? তোমার জন্যে নিয়ে এলাম। কখনো স্ত্রীর হাতে কোনো ভাল খাবার তুলে দেয় নি। পাবেই বা কোথায় ? কবে সচ্ছল পয়সার মুখ দেখেচে সে ? তার ওপর এই ভীষণ মন্বস্তর। ক্ষেত্র কাপালীর কাছেও পয়সা নেই যে ধার করবে। সে পেটুক ব্যক্তি। বসে বসে, যা কিছু এনেছিল, জিলিপি আর সিঙাড়া কিনেই ব্যয় করেচে। বেলা পড়ে এসেচে। নদীর ধার দিয়ে দিয়ে রাস্ত । দুজনে পথ হেঁটে চললো গ্রামের দিকে । ক্ষেত্র কীপালী বিড়ি টানচে আর বকবক করে বকচে । গঙ্গাচরণ চাদরের প্রান্তে দুটি মুড়ি-মুড়কি বেঁধে নিয়েচে–মাত্র দু'আনার। এত অল্প জিনিস যে কয়েক মুঠে খেলেই ফুরিয়ে যাবে। ছেলে দুটাে বাড়ীতে আছে, বলবে এখন, বাবা কি এনেচ আমাদের জন্তে ? ' ছেলেমানুষ, তারা কি মন্বন্তর বোঝে ? তাদের জন্যে দুটো নিয়ে যেতে হবে, দুটো ও খাবে একটা ভাল পরিষ্কার জায়গায় বসে। খেয়ে নদীর জল পান করবে। সারাদিন অনাহার, ক্ষুধা ও তৃষ্ণ দুই প্রবল ! এক জায়গায় গাছতলায় বসে গঙ্গাচরণ দু'তিন মুঠো মুড়ি-মুড়কি খেয়ে নিজে জলে নামতে গিয়ে দেখলে একটা শেওলা দামের ওপারে অনেক কলমীশাক । আজকাল দুলভ,শাকপাত কি লোক রাখচে ? ক্ষেত্র কণপালীকে বললে—জলে নামতে পারবি ? শাক নিয়ে আয় তো দিকি— ক্ষেত্র কাপালী গামছা পরে জলে নেমে একগলা জল থেকে দাম টেনে এনে কলমীলতার বাক ডাঙার কাছে তুললে। তারপর দুজনে মিলে শাক ছিড়ে বড় দুষ্ঠাটি বাধলে। বাড়ী