পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত శిసె: দড়ির মত চেহারা দুর্গ ভট্টচাষের এমন সুন্দর মেয়ে ! দুর্গ ভটচাষ বললে—ওরা সব কৈ ? হৈমবতী বললে—ওই যে বাবা গাছতলায় বসে আছে মা আর খোকার। আমি ওদের কাছে যাই বাবা ! বোচক নিয়ে মা হাটতে পারচে না। গঙ্গাচরণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েচে। এদের তাড়ানো আর তত সহজ নয়। এরা বোচক-কুঁচকি নিয়ে আহারের সন্ধানে দেশত্যাগ করে যখন রওনাই হয়েচে । বিশেষ করে মেয়েটিকে দেখে গঙ্গাচরণের মন নরম হয়েচে। অমন মুন্দরী মেয়ের অদৃষ্টে কি দুখ। খেতে পায় নি আজ ছুদিন । আহা ! স্নেহে গঙ্গাচরণের মন ভরে উঠলো। একটু পরে পাঠশালার ছুটি দিয়ে গঙ্গাচরণ সদলবলে বাড়ীর দিকে রওনা হোল। এরপর দিনকতক কেটে গেল। গঙ্গাচরণের বাড়ীতে দুর্গ ভট্টচাযের পরিবারবর্গ পাকাপোক্তভাবে বসেচে। অনঙ্গ-বেী নিজে খেতে না পেয়ে চি চি করচে অথচ সে কাউকে বাড়ী থেকে তাড়াবে না । ফলে সবাই মিলে উপোস করচে। এর মধ্যে ময়না বড় ভাল মেয়ে, গঙ্গাচরণ ক্রমে লক্ষ্য করলে । কোন খাবার জিনিস যোগাড় হলে ময়না আগে নিয়ে আসে অনঙ্গ-বেীকে খাওয়াতে। বলে—ও কাকীমা, এটুকু খেয়ে নাও তো ! ময়নার মা আবার বড় কড়া সমালোচক । সে বলে—যা, ও তোর কাকীমাকে দিতে হবে না। ওর শরীর খারাপ, ও তোমার ওই ময়দার গোলা এখন খেতে বস্তুক। যা, ও নিয়ে যা— দুর্গ ভটচায কোথায় সকালে উঠে চলে যায়। অনেক বেলা করে বাড়ী ফেরে। কিছু না কিছু খাবার জিনিস প্রায়ই আনে । চাল আনতে পারে না বটে, কিন্তু আনে হয়তো একটা নারকেল, একটা মানকচু, দুটাে বিরি কলাই, নিদেন দুটাে বড়ি। এসব আনে সে ভিক্ষে করে । আজকাল দুর্গ ভিক্ষে করতে শুরু করেছে। তবে তার ভিক্ষেটা ঠিক আর পাঁচজন ভিক্ষুকের মত নয়, ওরই মধ্যে একটু কায়দা আছে। সেদিন দুপুরে দুর্গ গিয়ে হাজির এ গ্রামেরই কাপালীপাড়ায়। নিধু কাপালীর বাড়ীর দাওয়ায় উঠে বললে—একটু তামাক খাওয়াতে পার ? নিধু কাপালী ব্রাহ্মণ দেখে শশব্যস্ত হয়ে বললে—আসুন, বমুন, ঠাকুরের কোথেকে আসা : হচ্ছে ? —আমার বাড়ী কামদেবপুর, আমি আছি এই গঙ্গাচরণবাবুর বাড়ী। —আপনার কেউ হন । জামাই নাকি ? —না না, আমার স্বজাতি ব্রাহ্মণ। এমনি এসে আছি ওঁর ওখানে ।