পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○●b" বিভূতি-রচনাবলী প্রকৃত নলের তখন বিমূঢ় দৃষ্টি ! তারপরে বনে-বনে ভ্ৰাম্যমাণ রাজ্যহীন সহায়-সম্পদহীন উন্মুক্ত নলের সে কি করুণ ও মৰ্ম্মস্পর্শী চিত্র! কতকাল তো হয়ে গেল, যদু হাজরার সে অপূৰ্ব্ব অভিনয় আজও ভুলিনি। চোখের জল কতবার গোপনে মুছলুম সারারাত্রির মধ্যে, পাছে আশপাশের লোক কান্না দেখতে পায়, কতবার ইচি আনবার ভঙ্গীতে কাপড দিয়ে মুখ চেপে রাখলুম। যাত্র শেষরাত্রে ভাঙল। কিন্তু পরদিনও আবার যাত্রা হবে শুনে আমি বাড়ী গেলুম না। একটা খাবারের দোকানে কিছু খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম। রাত্রে আবার যাত্ৰ হ’লো—শিথিধ্বজের পাল ৷ যদু হাজরা সাজলে শিখধ্বজ । এটা নাকি তার বিখ্যাত ভূমিকা, শিখিধ্বজের ভূমিকায় যত্ন হাজরা আসর মাতিয়ে পাগল কবে দিলে । সেই একরাত্রের অভিনয়ের জন্যে চার পাঁচখানা সেনা ও রূপের মেডেল পেলে যদু হাজরা । যাত্রা ভাঙল যখন তখন রাত বেশি নেই। আসরে একটা বেঞ্চিতে শুয়ে রাত কাটিয়ে সকালে এক নিজের গ্রামে ফিরে এলুম ! তারপর কয়েক বছর কেটেছে। তখন আমি আরও একটু বড় হয়েছি—স্কুলে ভর্তি হয়েছি। যদু হাজরার কথা প্রায় এর ওর মুখে শুনি । যেখানেই যাত্রা দলের কথা ওঠে, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে যাত্রা দলের মধ্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা যদু হাজরা । আমি কিন্তু বহুদিন যদু হাজরাকে আর দেখলুম না । এর অনেক কারণ ছিল । আমি দূরে শহরের স্কুল-বোর্ডিং-এ গেলুম। মন গেল লেখাপড়ার দিকে, ধরাবাধা রুটিনের মধ্যে জীবনের মুক্ত গতি বন্ধ হয়ে পডল । এ্যালজেব্রার আঁক, জ্যামিতির একৃস্ট্র, ইংরাজী ভাষার নেশা, ফুটবল, ডিবেটিং ক্লাব, খবরের কাগজ—জীবনের মধ্যে নানা পরিবর্তন এনে দিলে । ছেলেবেলার মতো যে যেখানে যাত্রার নাম শুনব সেখানেই দৌড়ে যাব—তা কে জানে চার ক্রোশ, কে জানে ছ' ক্রোশ—এমন মন ক্রমে ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগল। ইচ্ছে হ’লেও হয়তো স্কুলের ছুটি থাকে না, স্কুলের ছুটি থাকলেও বোর্ডিং-এর সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট ছাড়তে চান না—নানা উৎপাত । পাডাগায়ের ছেলে ছিলুম, থিয়েটার কাকে বলে জানতুম না। যে শহরে পডভুম, সেখানে উকিল-মোক্তারদের একটা থিয়েটার ক্লাব ছিল, তারা একবার থিয়েটার করলেন, পালটি ঠিক মনে নেই—বোধ হয় "প্রতাপাদিত্য”। ভাষা ও ঘটনার বিন্যাসে থিয়েটারের পালা আমাকে মুগ্ধ করল—ভাবলুম যাত্রা এর চেয়ে ঢের খারাপ জিনিস। প্লটের এমন বাধুনী তে যাত্রার পালাতে নেই? তারপর অনেকবার উকিলদের ক্লাব থিয়েটার দেখলুম— ছেলেবেলার মন ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে, বাজারে যাত্ৰা হ’ল বারোয়ারীর সময়ে, কলকাতার দল, কিন্তু তাতে আগেকার মতো আনন্দ পেলুম না । তারপর কলকাতায় এলুম। তখন নতুন মতের অভিনয় সবে কলকাতায় শুরু হয়েছে। বড় বড় বহু বিখ্যাত নটদের অভিনয় দেখবার সুযোগ জীবনে এই প্রথম ঘটল, তাদের নানা