পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ○>> একটা টুলের উপর বসে সে তামাক টানছে । আমি বললুম—কাল আপনার পার্ট বড় চমৎকার হয়েছে। বৃদ্ধ আগ্রহের মুরে আমার মুখের দিকে চেয়ে বললে—আপনার ভালো লেগেছে ? বললুম-চমৎকার! এমন অনেক দিন দেখিনি! কথাটার মধ্যে সত্যের অপলাপ ছিল। বৃদ্ধ খুব খুশি হ’ল, মনে হ’ল প্রশংসা জিনিসটা বেচারীর ভাগ্যে অনেকদিন জোটেনি। আসরে কাল যখন তরুণ অভিনেতাদের বেলায় ঘন ঘন হাততালি পড়েছে, যদু হাজরার ভাগ্যে সে জায়গায় বিদ্রপ ছাড আর কিছুই জোটেনি। বৃদ্ধ বললে—আপনি বোঝেন তাই আপনার ভালো লেগেছে। আর কি মশায় সেদিন আছে ? এখনকার সব হয়েছে আর্ট—অর্টি, সে যে কি মাথামুণ্ডু তা বুঝিনে। বৌ-মাস্টারের দলে ভৃগু সরকার ছিল। রাবণের পাটে আমন এ্যাকূটে। আর কেউ কখনও করবে না। আমি সেই ভৃগু সরকারের শীগরেদ–বুঝলেন? আমায় হাতে ধরে শিখিয়েছেন তিনি। মরবার সময় আমার হাত ধ’রে বলে গেলেন-যদু, তোমায় যা দিয়ে গেলাম, তোমার জীবনে আর ভাবনা থাকবে না ! আমি বললুম—এ বয়সে আপনি আর চাকুরি কেন করেন ? —না ক’রে কি করি বলুন ? বড় ছেলেটি উপযুক্ত হয়েছিল, আজ বছর দুই হ'ল কলেরা হয়ে মারা গেল। তাঁর সংসাব অামারই ওপর, নাতনীটির বিয়ে দিতে হবে আর কিছুদিন পরেই ৷ পয়সা আগে যা রোজগার করেছি হাতে রাখতে পারিনি। এখন আর তেমন মাইনেও পাইনে। দেড়শো টাকা পৰ্য্যস্ত মাইনে পেয়েছি এক সময়—আমার জন্তে অধিকারী আলাদা দুধ বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল, যখন ভূষণ দাসের দলে থাকতাম। এখন পাই পয়ত্রিশ টাকা মাইনে। আর সতীশ বলে ওই-যে ছোকরা কাল রামের পাট করলে—সে পায় আশি টাকা। ওরা নাকি আট জানে। আপনিই বলুন তো, কাল ওর পাট ভালো লাগল আপনার, না আমার পাট ভালো লাগল ? এখনকার আমলে ওদেরই খাতির বেশি অধিকারীর কাছে । আমাদের চাকৰি বজায় রাখাই কঠিন হয়েছে। মনে মনে ভেবে দেখলুম, যদু হাজরার এতদিন বেঁচে থাকাটাই উচিত হয়নি। চল্লিশ বছর আগে তরুণ যন্থ হাজরাকে বেী-মাস্টারের দলের ভৃগু সরকার যে ভাবে হাত-পা নাড়বার ভঙ্গি ও উচ্চারণের পদ্ধতি শিখিয়েছিল, বৃদ্ধ যদু হাজরা আজও যদি তা আসরে দেখাতে যায়, তবে বিদ্রপ ছাড়া আর কিছু প্রাপা হবে না—একথা তাকে বলি কেমন করে ? কালের পরিবর্তন তো হয়েছেই, তাছাড়া তরুণ বয়সে যা মানিয়েছে এ বয়সে তা কি আর সাজে ? এই ঘটনার বছর পাচ ছয় পরে নেবুতলার গলি দিয়ে যাচ্ছি ; একটা বেনেতি মশলার দোকানে দেখি যদু হাজরা বসে আছে। দেখেই বুঝলুম দারিদ্রের চরম সীমায় এসে সে ঠেকেছে। পরনে অৰ্দ্ধমলিন থান, পিঠের দিক্‌টা ছেড়া এক ময়লা জামা গারে। আমায় দেখে সে চিনতে পারলে না। আমি ওকে খুশি করবার জন্তে বললুম-আপনি চিনতে পারুন আর না-ই পরুিন, আপনাকে না চেনে কে ! আগুন কি ছাই চেপে ঢেকে রাখা যায় ? তা