পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ৩১৭ চাইব। সে নিজের ছেলেপিলে নিয়ে আতান্তরে পড়ে আছে। আহা, বাছার আমার মুখ দেখলে বুক ফেটে যায়। আমি তার কাছে কিছু নিই নে -তা তুই আমাকে আন চারেক পয়সা দিয়ে যাবি ? বুড়ীর অবস্থা দেখে বড় কষ্ট হ'ল। পকেট থেকে একটা টাকা বার করে তার হাতে দিয়ে বললাম—এখন রাখুন ঠাকমা, যখন যা দরকার হয়—আমি যতদিন বাড়ী থাকি, দিয়ে যাব আপনাকে । বুড়ী অবাক হয়ে গেল—আনন্দে বিস্ময়ে সে যেন প্রথমটা বুঝতেই পারলে না—আমি কি তাকে সত্যি একটা গোটা টাকা দিলুম। পরের বছর—পুজোর কিছু আগে দেশে গিয়েছি—বুড়ী দেখি আমাদের বাড়ীর সামনের বাতৰি লেবুর তলায় পথটা দিয়ে যাচ্চে-হাতে একটা কাসার জামবাটি। আমার দেখে বললে—কখন বাড়ী এলি ? বললুম—কাল এসেচি ঠাকুম। বাটি হাতে কোথায় গিয়েছিলেন ? —আর বলিস্নে, দাদা ! বাটিটা নাপিতবাড়ী নিয়ে গিয়েছিলাম যদি ওরা কেনে । আমার দিন তো আর চলে না, হাতে মোটে পয়সা নেই। সিধু খুলনে গিয়েছে—আজ চারপাচদিন । বাড়ী একেবারে অচল । ছেলেপিলেগুলো খেতে পায় না এমন অবস্থা । —ত বাটিটা বিক্রি করে আর ক'দিন যাবে ঠাকুমা ? —তবু যে ক'দিন যায়। তাও ওরা নিলে না—বলে এখন নগদ দিতে পারব না। ধারে বাটি দিলে আমার কি করে চলে ভাই বলে তো ? একটু গুড় খেতে পাচ্ছিনে, বাটিটা বেচে ভেবেছিলাম আজ হাটে অধিসের ভালো আকের গুড অনিতে দেব-আর আজকের হাটটাও হবে এখন। ছেলেপিলে শুধু ঝিঙে ভাজা আর ভাত খেয়ে মারা গেল। তা নিবি দাদা বাটিটা ?—ফুল কাসা, এ ওদের বাটি না । আমার নিজের বাটি-বিয়ের দানে আমার বাবা দিয়েছিলেন, দ্যাখ, না ? শহরে থাকি,—অনেক সময় কাচা পয়সা রোজগার করি। পাড়াগায়ে যে এত পয়সার কষ্ট তা ভেবে দেখি নে। আমার অন্তমনষ্ক দেখে বুড়ী ভাবলে বোধ হয় বাটি কেনবার ইচ্ছে নেই আমার। অনেকটা মিনতির স্বরে বললে—লা কিনিস্, ওটা বাধা রেখে আমার বরং আট আনা পয়সা দে । এ রকম অবস্থায় বুড়ীকে আমি আরও কয়েকবার দেখেছি। শুনলাম-বুড়ীর মরণকালে ছেলেরা কেউ আসেনি—বড় ছেলে খুব সেবাযত্ন করেছিল। বুড়ীর গারে একটা লেপ ছিল, মরণের ঘণ্টা দুই আগে বুড়ী পুত্রবধূকে বলেছিল—বেীম, . লেপট সরিয়ে নাও, চার-পাচ টাকা দামের লেপটা—আমি বঁচিব না, তখন ওটা আমার সঙ্গে ফেলে দিতে হবে । ও গেলে আর হবে না বেীমা । আহা, কোথায় পাবে সিধু যে, আবার চার-পাচ টাকা খরচ করে লেপ বানাবে? শীতকালে বাছারা আমার আছড় গারে কাটাবে তা হ’লে ৷