পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wob' বিভূতি-রচনাবলী আরও খানিক পরে বুড়ী ছেলেকে ডেকে বললে—ষ্ঠাখ, সিধু, একটা কথা বলি, শোন। আমার শ্রীদ্ধে বেশি কিছু খরচপত্র করতে যাসনে যেন । বিধু, মণি, শরৎ ওরা কেউ কিছু হয়তো দেবে ন—তুই এক পাবি কোথায় যে খরচ করবি ? নমো নমো করে অমনি পাচটি ব্রাহ্মণ থাইরে দিবি । আর যদি ওরা কেউ কিছু পাঠায়, তাও সব টাকা খরচ করিস নে । হাতে কিছু রাখবি,–এর পরে তোর ছেলে-পিলের খেয়ে বাচবে। শুনলাম শশী-ঠাকরুণের ছেলেরা সবাই বাড়ী এসেছে ও খুব ঘটা করে মারের শ্রাদ্ধ করছে । বেড়াতে বেড়াতে ওদের বাড়ীর দিকে গেলাম। সামনের উঠানে নারিকেলের ডাল পুতে বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে—মগুপের সামনে শামিয়ান টাঙানো । গ্রামের অনেকেই সেখানে উপস্থিত, সেজ ছেলে গোপেশ্বর কাছ গলায় গ্রামের বৃদ্ধ চৌধুরী মহাশয়ের সঙ্গে আফিসে নূতন লোক ঢোকানো আজকাল যে কত অসম্ভব হয়েছে-সে সম্বন্ধে কি বলচে । গোপেশ্বরের বয়েস পয়তাল্লিশ ছাড়িয়েছে, রেলের অডিট অফিসে বড় চাকুরি করে—চৌধুরী মহাশয় বোধ হয় তাকে কারো চাকুরির জন্তে বলে থাকবেন, কথার ভাবে তাই মনে হ’ল । —আগে অনেক ঢুকিয়েছি কাকাবাৰু, সিমসন গিয়ে পৰ্য্যন্ত আর সেই সুবিধে নেই। সিমসন সাহেব, আমি যা বলেছি তাই করেছে। এখন পোস্ট খালি হ’লে সব তলায় তলায় ঠিক হ’য়ে যায়—আপিসের আর সে দিন নেই। শুনলাম গোপেশ্বর রিটায়ার করবার পরে প্রভিডেন্ট ফণ্ডের দরুণ প্রায় আঠার উনিশ হাজার টাকা পাবে, হাওড়ায় না বরানগরে জমি কিনেছে সেই খানেই বাড়ী করবে । আজ দশ-এগারো বছরের পরে সে দেশে এসেছে, মায়ের মৃত্যু না ঘটলে, আরও কতদিন আসতে না তাই বা কে জানে! ওদের বাড়ীর মধ্যে ঢুকে আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। এদের বাড়ীতে যে এত ছেলে-মেয়ে, বেী, ঝি-চাকর অাছে—ত চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবার জো ছিল না । মেজ, সেজ ও ছোট ছেলের বৌয়েরা এসেছে, তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি, নাতনীতে বাড়ী ভৰ্ত্তি। খুব ছোট বেলায় যে মেয়েদের দেখেছিলাম, হয়তে অনেকের সঙ্গে খেলাও করেছি —তাদের বিয়ে হয়ে ছেলেপিলে হয়ে গিয়েছে—অনেকের স্বামীরাও এসেছে। তবু তো বুড়ীর বড় মেয়ে অনেক দূরে থাকে বলে আসতে পারেনি—অপর দুই মেয়ে ও তাদের ছেলেমেয়েরা এসেছে। সবাই ব্যস্তসমস্ত, এখানে তরকারি কোটা হ'চ্চে, ওখানে জিনিসের ফাঁদ হ’চ্ছে, বাষ্ট্রীমর ছেলেমেয়েদের চিৎকার, হাসি, ছোটাছুটি—মেয়ের এ ওকে ডাকছে, মায়েরা ছেলেপিলেদের বকছে, কুয়োতলীয় বড় বড় পেতলের গামলা মাজার শব্দ, বাড়ীমুদ্ধ সবাই শশব্যস্ত, কারে হাতে একদণ্ড সময় নেই । —ওরে ও ঝি, রেণুর গায়ের জামাট ছাড়িয়ে নিয়ে কেচে দে না বাপু, কতক্ষণ থেকে বলছি, আমার কি সব সময় সব কথা মনে থাকে ? —ও কমলা, হেলে দুলে বেড়াচ্ছ মা, ততক্ষণ পানগুলো তুমি আর বন নিয়ে ধুয়ে ফেল