পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৯ বিভূতি-রচনাবলী নয়—ভোলার মাকেও লক্ষ্য করলুম,—জায়েদের বড়মামুৰি চালচলন ও কথাবার্ভার মধ্যে নিতান্ত সঙ্কুচিত হয়ে আছে । জায়েরা বড়মামুষি দেখাবার জন্তে প্রত্যেকে ঝি-চাকর এনেছে, তাদের কাছেও যেন ও-বেচারী কুষ্ঠিত ও সঙ্কুচিত । হঠাৎ কোথা থেকে বিকাশের ছোট দিদি আরতি ঝড়ের মত এসে বললে—এই যে এখানে বসে গল্প হচ্ছে ছেলের । ওদিকে কাকীমা, দিদি—সব ডেকে ডেকে হয়রান, চা হ’য়ে গেছে, খেয়ে এসে সবার মাথা কেনো, যাও— ওকে দেখেই আমার একটা ছবি মনে এসে গেল। বৃদ্ধ, মাজা-বাকী গাল-তোবড়ানো শশী-ঠাকরুণ র্কাসার বাটি বিক্রয় করতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছে নাপিত-বাড়ী থেকে । এই হাসিমুখ বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী, তরুণী—এদের সৌন্দর্য্য, সজীবতা, আনন্দ, যৌবন—এদের স্বাক্ট করেছে সেই দরিদ্র বৃদ্ধ শশী-ঠাকরুণ–এরা তারই বংশধর- তারই পৌত্র, পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী, আজ তার মৃত্যু-বাসরে এই যে চাদের হাট বসেছে—এতদিন এর ছিল কোথায় ? এরা থাকতে বুড়ী কেন খেতে পেত না, কেন চোখের জলে তার বুক ভেসেছে —তার কোন উত্তর নাই । সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার সেই বাড়ীওয়ালা বুদ্ধ ভদ্রলোকের বাড়ীর উৎসবের কথা ও মনে পড়ে গেল। এইরকমই অগণিত পুত্র, কস্তা, পৌত্র, দৌহিত্রী দৌহিত্রর ভিড দেখেছি সেখানেও । সবই সেইরকম—কেবল সেটা ছিল জন্মতিথি উৎসব-জন্মতিথি যার, তার বয়েস শশী-ঠাকরুণের মতই প্রায় । ستمہا" সহ দুপুরে বাসায় শুইয়া আছি, এমন সময়ে উচ্ছলিত খুশি ও প্রচুর তরল হান্তমিশ্রিত তরুণ কণ্ঠস্বরে শুনিতে পাইলাম, ও সই, সই লো—ও—ও, ক্যামন আছ, ও সই ? পাশের ঘর হহতে আমার ভগ্নি ( বিধবা, বয়স ত্রিশের বেশি ) হালির সুরেই বলিল, এস সই, এস। ব'ল, কি ভাগ্যি যে এ পথে এলে ? —এই তোমার সয়া হাট কত্তি এল । নতুন গুড়ের পাটালি সের দুই করেলে আজ বেন বেলা । ছোট ছেলেডার আবার জর আর ছদি । তাই তোমার সয়াকে হাটে পাঠালাম, আমি বলি সইয়ের সঙ্গে কতদিন দেথা হই নি । ছেলেডাকে নিয়ে আর হাটের ভিড়ের মধ্যে ক’নে যাব, সইয়ের বাড়ী একটু বসি । কথার ভঙ্গিতে মনে হইল দুলে কি বাগদীদের মেয়ে । আমার বোনের সহিত সই পাতানে তাহার পক্ষে আশ্চৰ্য্য নয়, কারণ তাহার ও শ্বশুরবাড়ী নিকটবৰ্ত্তী এক পল্লীগ্রামেই । ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার সুবিধার জন্ত শহরের বাসায় থাকে। দুপুরের ঘুম নষ্ট হইল। বোনের নবাগত সঙ্গীটি লেখাপড় ভালো করিয়া শিখিলে