পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

·GO8 বিভূতি-রচনাবলী এরকম কথা আমি আরও শুনিয়াছি অন্ত-অন্ত লোকের মুখে । মনে হইত তাদের নাকে ঘুষি লাগাইয়া দিই, তাদেব সঙ্গে ঝগড়া করি, তাদের বলি—না, তোমরা জান না । তোমাদের মিথ্যে কথা । তোমাদের অনেকেব চেয়ে খুড়ীমা ভালো— খুব ভালো । কিন্তু যাহারা বলে তাহাবা গ্রামসম্পর্কে গুৰুজন, বয়স অনেক বেশি। কাজেই চুপ করিয়া থাকিতাম । তাহাব চেহারা, মুখশ্ৰী এতকাল পরে আমার খুব যে স্পষ্ট মনে আছে তা নয়। কেবল একদিনের তাব অপূৰ্ব্ব কৌতুকৌজ্জল হাসিমুখ গভীব ভাবে আমার মনে ছাপ দিয়াছিল। যখন সে মুখ মনে পড়ে তখন একটি উনিশ-কুডি বছবেব কৌতুকপ্রিয়া, হাস্যমুখী সুন্দৰী তরুণীকে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখিতে পাই । সে বাব আমাদেব গ্রামে কোথা হইতে এক দল পঙ্গপাল আসিয়াছিল। গাছপালা, বাশবন, সজনেগাছ, ঝোপঝাপ পঙ্গপালে ছাইয়া ফেলিল। খুড়ীমা ও আমি ছাদে দাডাইয়া এ-দৃপ্ত দেখিতেছিলাম—দু’জনেব কেহই আর যে কখনও পঙ্গপাল দেখি নাই, তাহা বলাই বাহুল্য। হঠাৎ খুভীম বিশ্বরে ও কৌতুকে আঙুল বাডাইরা দেখাষ্টয়া বলিলেন— ও পাবু, আখ, ছাথ—বায়দেব নিমগাছে একটা পাতাও রাখে নি, শুধু গুড়ি আর ডাল, এমন কাও তো কখনও দেখি নি—ও মাগো । বলিয়াই কৌতুকে ও আনন্দে বালিকার মতো খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। র্তাব এই হাসিমুখটিই আমার মনে আছে। বর্ষ। কাটির শরৎ পডিল । আমাদের নদীর দু-ধারে কাশফুল ফুটির আলো করিল। আকাশ নীল, লঘু শুভ্ৰ মেঘখণ্ড বাদামবনীর চরের দিক হইতে উড়িয়া আসে, আমাদের সায়েরের ঘাটের উপর দিয়া, গিরীশ-জ্যাঠাদের বড় আমবাগানের উপর দিয়া শুভরত্নপুরের মাঠের দিকে কোথায় উডিয়া যায় বড় বড় মহাজনী কিস্তী নদী বাহিয়া যাতায়াত শুরু করিয়াছে, কয়ালরা ধান মাপিতে দিনরাত বড ব্যস্ত । খুড়ীমা আমাদের গ্রামেই রহিয়া গেলেন। পরেশ-কাকাও পাগলাগারদ হইতে বাহির হইলেন না। খুড়ীমাদের বাড়ী তার ননদের এক দেওর আসিল পূজার সময়, নাম শান্তিরাম, বয়স চব্বিশ-পচিশ, দেখিতে চেহারাটা ভালোই । অল্প দিনের জন্য এখানে বেড়াইতে আসিয়া কেন যে কুটুম্ববাড়ী ছাডিয়া আর নডিতে চায় না, যাইলেও অল্প দিনের মধ্যে ফিরিয়া আসিয়া আবার কিছু কাল কাটাইয়া যায়—ইহার কারণ আমি কিছু বলিতে পারিব না—কেবল ইহা শুনিলাম যে গ্রামে তার নামের সঙ্গে খুড়ীমার নাম জড়াইয়া একটা কুকথা লোকে রটন করিতেছে। একদিন দুপুরের পরে খুড়ীমাদের বাড়ী গিরছি। পিছনের রোয়াকে পেঁপেতলার জানলর ধারে খুড়ীমা বসিয়া আছেন, শাস্তিরাম বাহিরের রোয়াকে দাড়াইয়া জানালার গরাদে ধরিয়া খুড়ীমার সঙ্গে আস্তে আস্তে এক-মনে কি কথা বলিতেছে— আমাকে দেখিয়া বিরক্তির মুরে বলিল—কি পাৰু, দুপুরবেলা বেড়ানো কি ? পড়াশুনো