পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘L8• বিভূতি-রচনাবলী লোকটা যে ভালো লোক ছিল, তা নয়। মাইনে বাকি ফেলতে লাগল, বাজারের পয়সা চুরি করি, এমন সন্দেহও মাঝে মাঝে করতো। আমি সে সব গারে মাখিনি কোনোদিন। চার মাস এই ভাবে কাটল। এই চার মাসে আমার অন্ত কোন ধ্যান-জ্ঞান ছিল না, কেবল মনিবকে ঠিক সময়ে দু'টি খেতে দেব এবং ভালো খেতে দেব। কিরকম—দুএকটা উদাহরণ দিই। একবার শুনলুম মুলী বলে একটা পাহাড়ী নদীতে বাধ বেঁধে সাওতালরা বড় চিংড়ি মাছ ধরবে। মাছ জিনিসটা ওদেশে বড় দুলভ বস্তু। টাকা-পয়সা ফেললেই পাবার জো নেই। চিংড়ি মাছ আনবার জন্তে ভয়ানক পাথর-তাত রৌদ্রের মধ্যে-সাপ্ত মাইল চলে গেলুম এবং মাছ নিয়ে ফিরে আসে রান্না করে খাওয়ালুম মনিবকে। সে কথা বললুমও না যে কোথা থেকে মাছ এনেছি। চার মাস পরে রান্নার খ্যাতি ও প্রভুভক্তির কথা জরীপের তাবুর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সে দেশটাতে ভালো বাঙ্গালী রাধুনী পাওয়া যায় না, সকলেই আমার মনিবকে বেশ একটু হিংসের চোখে দেখতে লাগল, ক্রমে আমার কাছে চুপি চুপি লোক হাটতে শুরু করলে আমার ভাঙ্গিয়ে নেবার জন্তে । বেশি মাইনে দিতে চায়, নানারকম সুবিধে করে দিতে চায়। আমি কিছুতেই গেলাম না। জরীপের হেড, কানুনগো কুড়ি টাকা পৰ্য্যন্ত মাইনে দিতে চাইলে, আমি তখন পাই মোটে সাত টাকা । কিন্তু টাকার সুবিধের কথা আমার মনেই উঠল না। আমার মনিবকে তো আমি এ সব কথা কিছুই বলতাম না । মাস পাঁচ-ছয় পরে কি জানি কেমন কুবুদ্ধি হ’ল মনিবের, আমায় অকারণে বকুনি গালাগালি শুরু করলে। আগেও যে একেবারে না বকতো এমন নয়, কিন্তু তাতে মাত্রা থাকতো। পুরনো হওয়াতে মনিব বোধ হয় ভাবতে লাগল আমার আর যাবার জায়গা নেই —কাজেই কারণে অকারণে গাল-মন্দ ক্রমেই মাত্রা ছাড়িয়ে উঠতে লাগল। একদিন মনিব আমার ডেকে বললে-শোন এদিকে। আলুতে বালি দিয়ে রাখোনি কেন ? সব যে কল বেরিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েচে— সন্ধ্যার কিছু আগে। আমি আধ মাইল দূরবর্তী দোকান থেকে সবেমাত্র তেল, মশলা কিনে ফিরে এসেচি। বললাম—বালি তো দেওয়াই ছিল, বর্ষাকালে বালি দিলেও কি কল বেরুনো সামলানো যায় বাৰু? মনিৰ হঠাৎ চটে উঠে বললে—কি ! পাজি, র্যাস্কেল, আমার সঙ্গে মুখোমুখি উত্তর ? বলেই আমার মারলে দু'টো চড়। তারপর গটগট করে বাইরে চলে গেল। আমার হাত থেকে তেলের বোতল পড়ে চুরমার হয়ে গেল। মারের চোটে ও অপমানে কান লাল হয়ে উঠল। সেখানে বসে পড়লুম এবং অনেকক্ষণ শূন্তদৃষ্টিতে চেয়ে বসে রইলুম। কিন্তু শুনলে আপনি আশ্চৰ্য্য হবেন এবং আমিও তখন আশ্চৰ্য্য হয়ে গিয়েছিলুমযে,মনিবের ওপর রাগের পরিবর্তে আমার উন্টে একটা করুণার উদ্রেক হ'ল। ভাবলুম—আহা, লোকটা জানে না যে, ওর নিজের দেবে এবার আমি হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছি । হেড, কানুনগোর