পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু OAL হীর চাকুরিতে খুব উন্নতি ক’রে ফেলেচে তার মুন্দর চরিত্রের গুণে। চিফ ইঞ্জিনীয়ারের আপিসে বদলি হ’ল দেড়শো টাকার মার্চ মাস থেকে। হীরু আর সেই হীরু নেই। এমনি হয়, এতে আশ্চৰ্য্য হবার কিছু নেই। প্রতিদিন, প্রতি মাস, প্রতি বৎসর, তিলে তিলে মানুষের দেহের ও মনের পরিবর্তন হচ্ছে—অবশেষে পরিবর্তন এমন গুরুতর হয়ে ওঠে যে, বহুকাল পরে আবার সাক্ষাৎ হ’লে আগের মানুষটিকে আর চেনাই যায় না। হীরু ধীরে ধীরে বদলেচে। অল্প অল্প ক'রে সে কুমীকে ভুলেচে। রামকৃষ্ণ আশ্রমে যাবার বাসনাও তার নেই বর্তমানে। এর মূলে একটা কারণ আছে, সেটা এখানে বলি। জামালপুরে একজন বয়লার-ইনস্পেক্টর ছিলেন, তার বাড়ী হুগলী জেলায়, রুড়কীর পাস ইঞ্জিনীয়ায়, বেশ মোটা মাইনে পেতেন। কিন্তু অদৃষ্টের দোষে তার ছটি মেয়ের বিয়ে দিতে র্তাকে সৰ্ব্বস্বাস্ত হ’তে হয়েচে । এখনও একটি মেয়ে বাকি । হীরুর সঙ্গে এই পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠতা জন্মেছিল । সুরমা হীরুর সামনে বার হয়, তাকে দাদা বলে ডাকে, কখনও কখনও নিজের আঁকা ছবি দেখায়, গল্প করে, গান শোনায়। একদিন হঠাৎ হীরুর মনে হ’ল—সুরমার মুখখানা কি মুনার! আর চোখ দুটি—পরেই ভাবল—ছি, এসব কি ভাবচি ? ও ভাবতে নেই। আর একদিন অমনি হঠাৎ মনে হ’লো—কুমীর চেয়ে সুরমা দেখতে ভালো—কি গায়ের রং সুরমার ! তখনই নিজের এ চিন্তায় ভীত ও সঙ্কুচিত হ’য়ে পড়ল। না, কি ভাবনা এসব, মন থেকে এসব জোর করে তাড়াতে হবে। কিন্তু জীবনকে_প্রত্যাখ্যান-কর আত-সহজহ’লে আজ গেরুয়াধারী স্বামীজীদের ভিডে পৃথিবীটা ভৰ্ত্তি হয়ে যেতো। হীরুর বয়েস কম, মন এখনও মরে নি, শুষ্ক, শীর্ণ, এক অতীত মনোভাবের কঙ্কালের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখতে তার নবীন ও সতেজ মন দ্বার আপত্তি জানালে। কুমীর সঙ্গে যা কিছু ছিল, সে অমূল তব শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে গিয়েছে আলো-বাতাস ও পৃথিবীর স্পর্শ না পেয়ে । সুরমাকে বিয়ে করার কিছুদিন পরে সুরমার বাবা বয়লার ফাটার দুর্ঘটনায় মারা গেলেন, রেল কোম্পানী হীরুর শাশুড়ীকে বেশ মোটা টাকা দিলে এজন্তে ; প্রভিডেন্ট, কণ্ডের টীকাও যা পাওয়া গেল তাতে মেয়ের বিয়ের দেন শোধ করেও হাতে ছ’ সাত হাজার টাকা রইল। মুরমার মা ও একটি নাবালক ভাইয়ের দেখাশোনার ভার পড়েছিল হীরুর উপর, কাজেই টাকাটা সব এসে পড়লে হীরুর হাতে। হীর সে টাকায় কয়লার ব্যবসা আরম্ভ করল। চাকরি প্রথমে ছাড়ে নি, কিন্তু শেষে রেল কারখানায় কয়লার কণ্টাক্ট নিয়ে একবার বেশ মোটা কিছু লাভ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসাতে ভালে ভাবেই নামল। সুরমাকে বিয়ে করার চার বছরের মধ্যে হীর একজন বড় কণ্টাক্টার হয়ে পড়ল। শাশুড়ীর টাকা বাদ দিয়েও নিজের লাভের অংশ থেকে সে তখন ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা কারবারে ফেলেচে । সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে হীরার চালচলনও বদলে গিয়েচে । রেলের কোয়ার্টার ছেড়ে দিয়ে মুঙ্গেরে গঙ্গার ধারে বড় বাড়ী ভাড়া নিয়ে সেখানেই সকলকে রেখেচে । রেলে