পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wo বিভূতি-রচনাবলী মেয়েটার পরণে নেই কাপড়, জামাই আসে যায়, কাপড়ের কথা বলি, কানেও তোলে না। আমি যে কি ক’রে চালাই ? তা সবই অদৃষ্ট ! নইলে— কুমী বাজালো স্বরে বললে—আঃ যাও না, গা ধুয়ে এসো নী—কি বকবক শুরু করলে— অদৃষ্ট, ই অদৃষ্টই। সে আজ কোথায়, আর কুমী কোথায় পড়ে কষ্ট পাচ্চে। পরণে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই, জীবনে আনন্দ নেই, সাধ-আহলাদ নেই, কিছুই দেখলে ন, কিছুই ভোগ করলে না, সবই অদৃষ্ট ছাড়া আর কি ? খানিক রাত্রে হীরু উঠল। কুমী প্রদীপ ধরে এগিয়ে দিলে পথ পৰ্য্যস্ত। বললে—আমাদের হারিকেন লণ্ঠন নেই, একটা পাকাটি জেলে দিই, নিয়ে যাও হীর দা, বাশবনে বডড অন্ধকার । সকালে কুমী পিসিমার বাড়ী এসে ডাক দিলে—কি হচ্চে, ও হীরুদ– —এই যে কুমী, কামিয়ে নিলাম। এইবার নাইবো । কুমী ঘরের মধ্যে ঢুকে বললে—কেন, কিসের তাড়া নাইবার এত সকালে ? তোমার কিন্তু আজ যাওয়া হবে না হীরুদা—বলে দিচ্চি। আজ ভাদ্রমাসের লক্ষ্মীপূজোর অরন্ধন, তোমার নেমস্তন্ন করতে এলুম আমাদের বাড়ী। মা বললেন—যা গিয়ে বলে আয়। হীরু আর প্রতিবাদ করতে পারলে না, কুমীর কাছে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই সে জানে। কুমী খানিকটা পরে বললে—আমার অনেক কাজ হীকদা, আমি যাই। তুমি নেয়ে সকালে সকালে এস । হীরু বেলা দশটার মধ্যে ওদের বাড়ী গেল। আজ আর রান্নার হাঙ্গামা নেই। কুমী বললে-আজ কিন্তু পান্ত ভাত খেতে হবে জানো তো? আর কচুর শাক-আর একটা কি জিনিস বলে তো ? - উহু...তুমি বলতে পারবে না। কুমীর মা বললেন—কাল রাত্রে তুই চলে গেলে মেয়ে অত রাত্রে তোর জন্তে নারকেল কুমডে রধিতে বসল। বললে, হীরদ বড় ভালোবাসে মা, কাল সকালে খেতে বলব, রোধে রাখি । কুমী স্নান সেরে এসে একথানা ধোয়া শাড়ী পরেচে, বোধহয় এইখানাই তার একমাত্র ভালো কাপড । সেই চঞ্চল মুখরা বালিকা আর সে সত্যিই নেই, আজি দিনের আলোয় কুমীকে দেখে ওর মনে হ’ল—কুমীর চেহারা আরও সুন্দর হয়েচে, তবে ওর মুখে চোখে একটা শাস্ত মাতৃত্বের ভাব ফুটে উঠেচে, যেটা হীরু কখনো ওর মুখে দেখে নি। কুমী অনেক ধীর হয়েছে, অনেক সংযত হয়েচে। মাথায় সেই রকমের এক চাল চুল, মুগলী এখনও সেই রকম লাবণ্যময়। তবুও যেন কুমীকে চেনা যায় না, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বালিকা কুমী অস্তৰ্হিত হয়েচে, এখন যে কুমীকে সে দেখচে তার অনেকখানিই যেন সে চেনে না। কিন্তু খানিকটা বসবার পরে হীরুর এ ভ্রম ঘুচে গেল। বাইরের চেহারাটা যতই বদলে যাক না কেন, তার সামনে যে কুমী বার হয়ে এল, সে সেই কিশোরী কুমী। ওর যেটুকু পরিচিত তা ওর মধ্যে থেকে বা’র হয়ে এল—যেটুকু হীরুর অপরিচিত, তা নিজেকে গোপন রাখলে ।