পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু లe? সে সোজা গিয়া হাজির হইল হিন্দুস্থান কেমিক্যাল কোম্পানীর আপিসে। প্রচণ্ড' ব্যাপার। লোকজন, লিফট, দরওয়ান, ঘোরানো দরজা, দিনমানে ইলেক্‌টিক আলো জালিয়া কাজ চলিতেছে। ঘন ঘন টেলিফোন বাজিবার শব্দ। এই জন্তেই বোধ হয় নগু দালালের শরণাপন্ন হইতে হয়। এখানে জিনিস বেচা কি পাড়াগায়ে লোকের কৰ্ম্ম ? অবশেষে সন্ধান মিলিল এনকোয়ারী আপিস হইতে। জিনিস ক্রয় করিবার ভার যার উপর, তার বয়েস খুব বেশি নয়। লোকটা মাল দেখিয়া শুনিয়া যা দর বলিল, বেলেঘাটা মুখুয্যে মশায়ের আড়তের দরের তুলনায় মনপিছু অন্ততঃ আট আনা বেশি। মাল নামাইয়া ওজন করিয়া দিতে দেরি হইয়া গেল। কেরানী বাবুটি জিজ্ঞাসা করিল— আপনি চেক নেবেন, না নগদ টাকা ? কাল এসে টাকা নিয়ে যাবেন তবে । আজ ক্যাশ থেকে টাকা বের করে রেখে দেব। একটা বিল ক’রে বড় বাবুর কাছে সই করিয়ে নিয়ে আসুন । বিলখানা এখানে দিয়ে যাবেন। পরদিন কাউন্টারে বেজায় ভিড়। আজ টাকা দিবার দিন, অনেক লোক টাকা লইতে আসিয়াছে। এক-একখানা খামের উপর পাওনাদারের নাম টাইপ করা । কেরানী বাৰু জিজ্ঞাসা করিতেছে—কি নাম । রামশরণ পাল –এই নিন। পাওনাদার একখানা থাম লইয়া চলিয়া যাইতেছে—কেহ কেহ বা খাম খুলিয়া নোটগুলি দেখিয়া লইতেছে। হরিপদর হাতে কেরানী এমনি একখানা খাম দিল । তার ওপরে লেখা আছে H.P.B. সামান্ত চল্লিশ টাকার জন্ত খাম খুলিয়া টাকা দেখিয়া লইতে তাহার লজ্জা করিতে লাগিল। এত কাগুকারখানা যেখানে, সেশনে কি আর ভুল হইবার সম্ভাবনা আছে? থামের বাহিরে টাইপ করা অক্ষরে তার নাম লেখা ঠিকই আছে। কিন্তু শেয়াল দ্য স্টেশনে আসিয়া “মি খুলিয়া নোটগুলি কি ভাবিয়া একবার দেখিয়া লইতে গিয়া হরিপদ মাথা ঘুরিয়া সেখানে বসিয়া পড়িল। চারিদিকে সে তাড়াতাড়িই নোটের খামখানা পকেটে পুরিয়া সোজা প্যাটফৰ্ম্মে ঢুকিয়া ট্রেণে চডিয়া বসিল । শীতকালেও কপালে বিন্দু বন্ধু ঘাম দেখা দিল। সৰ্ব্বনাশ! সব ক'পানাই একশো টাকার নোট, সৰ্ব্বমুগ্ধ এগারে খান। চল্লিশ টাকার জায়গায় এগারশে টাকা । এ ভুল কি করিয়া হইল হরিপদ বুঝিতে পারিল না। হয়তো তাড়াতাড়িতে অন্ত কোনো বড় পাওনাদারের থাম তাহাকে দিয়েছে। তাহারও নাম বোধ হয় H. P. B., মত ভিড়ের মধ্যে কেরানী বাৰু কাহার নামের খাম কাহাকে দিয়াছে। - এগারশো টাকা ওtহার নিকট অ-নে-ক টাকা । সামান্ত অবস্থার মানুষ সে, গাছ-গাছড়া ৰেচিয়া সংসার চালায় ! ভগবান দিয়া দিয়াছেন—উ, আর কি সময়েই দিয়াছেন—ভগবানের দান তো। সার-জীবন গাছ-গাছড়া বিক্রয় করিয়াও সে এগারোশো টাকা জমাইতে পারিত না। আর একসঙ্গে নগদ এতগুলি টাকা হাতে পাওয়া কি সোজা কথা ? কার মুখ দেখিয়াই