পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী فيين ولايا কি ভয়ানক বাধা হইয়া উঠিয়াছে স্ত্রীর এই অনুরোধ। কেন ছাই এ কথা ও স্ত্রীকে বলিতে গিয়াছিল ? ওর মুখের দিকে চাহিলে কষ্ট হয়, ওর কাতর অনুরোধ শুনিলে মনে হয় —দূর করে, কাজ নাই সাধুতা দেখাইয়া। ওই অভাগিনীকে জীবনে কখনো সে সুখী করিতে পারে নাই, টাকাটার একটা ব্যবসা খুলিয়া দিলে অল্পবন্থের কষ্ট্রের একটা মীমাংসা হইবে। এখানে সাধু সাজা স্বার্থপরতা, ঘোর স্বার্থপরতা। আশালতার বয়েস কম, জীবনে কোনো সাধ ওর পূর্ণ হয় নাই। ওর মুখের দিকে চাহিয়া না হয় সে নিজের কাছে অসাধুই হইরা রহিল। দিনে এই সব ভাবে, কিন্তু গভীর রাত্রে যখন গ্রাম নিযুতি হইয়া যায়, আশালতা ঘুমাইয়া পডে, তখন তার মনে হয় চুরির স্বপক্ষে কি চমৎকার যুক্তিই সে বাহির করিয়াছে। জুয়াচুরি জুয়াচুরিই, তার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি নাই, ভর্ক নাই। টাকা তাকে ফিরাইয়া দিতেই হইবে, নিজের কাছে চোর হইয়া সে থাকিতে পারিবে না। নিদ্রিত আশালতার মুখের দিকে চাহিয়া সে ভাবিল—ছি ছি, মেয়েমানুষ জাতটা কি ভয়ঙ্কর ! ওদের মনে কি এতটুকু সৎ কিছু জানে না ? কেবল টাকা-কডি, গহনা, চাল-ডালের टिक नछब्र ? দিন যায়। হরিপদ দেখিল, সে স্ত্রীকে মনে মনে অশ্রদ্ধা করিত্তে আরম্ভ করিয়াছে। তাহার কত আদরের আশালতা । যাহাকে চোখ ভরিয়া দেখিয়াও চোখের তৃপ্তি হইত না, তাহার সম্বন্ধে এ সব কি ভাবনা তার মনে ? একদিন হঠাৎ তাহদের একটা বাছুর মরিয়া গেল । এবার হরিপদ ভাবিল—তা যাবে না ? সংসারে যখন ওর মতো মেয়ে এসেচে । তথন ওর পরামর্শেই সংসার এবার উচ্ছল্পে যাবে। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণ তাহার বদ্ধমূল হইতে লাগিল। আজকাল স্ত্রীর প্রতি ব্যবহারটা দিন দিন কক্ষ হইয়া উঠিতেছে। সামান্ত কথার পিটখিট করে, সামান্ত ব্যাপার লইয়া-স্ত্রীকৃে দু’কথা শুনাইয়া দেয়। মনের মিলের জোড় ক্রমে অলক্ষিতে খুলিতে লাগিল। আশালত ভাবিয়া কুল পায় না, তাহার অমন স্বামী কেন এমন হইয়া যাইতেছে দিন দিন ? ক্রমে তাহার মনেও ভাঙন শুরু হইল। ভাবে এত হেনস্তা কিসের ? কোন জিনিসটাতে আমার ক্রটি হয় ? উদয়ান্ত মুখে রক্ত উঠে গেটে মরি, সে কথা একবার বলা তো দূরের কথা, উণ্টে আবার পান থেকে চুন খসলেই এই সব গাল-মন্দ, অপমান ? গত মাসখানেক সেই আপিলের টাকাতে হাত পডিয়াছে। এরই মধ্যে ত্রিশ চল্লিশ টাকা খরচ হইয়া গিয়াছে। আশালত ভাবে—‘ওর শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েচে রোদে রোদে সাত গায়ের বন-জঙ্গলে ঘুরে। ওকে একটু সারিয়ে তুলি। গত মাস হইতে আশালতা রাত্রে প্রায়ই লুচি ভাজিয়া স্বামীকে পাওয়ার। মাঝে মাঝে ভালো খাবার দাবার করে। একদিন বলিল-ওগো, তোমার পায়ের দিকে একবার নজর দাও। এক জোডা জুতো কিনো দিকি ভালো দেগে । জলে-জলে পা হেজে পাকুই ধরে গেল যে !