পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOboe বিভূতি-রচনাবলী ভাবিল—আহা, যখন পুতি, তখনও ওর গা গরম, বেশ গরম ছিল...হঠাৎ দেখিল সে কঁদিতেছে, অঝোর ধারে কাদিতেছে ..বাহিরে ঐ বৃষ্টিধারার মতো অঝোর ধারে. বার বার তার মনে হইতে লাগিল—তখনও ওর গা গরম ছিল । বেশ গরম ছিল. তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প সন্ধ্য হইবার দেরি নাই। রাস্তায় পুরোনো বইয়ের দোকানে বই দেখিয়া বেড়াইতেছি, এমন সময়ে আমার এক বন্ধু কিশোরী সেন আসিয়া বলিল, এই যে, এখানে কি ? চল চল জ্যোতিষীকে হাত দেখিয়ে আসি । তারানাখ জ্যোতিষীর নাম শোন নি ? মস্ত বড় গুণী । হাত দেখানোর বেীক চিরকাল আছে। সত্যিকার ভালো জ্যোতিষী কখনও দেখি নাই । জিজ্ঞাসা করিলাম—বড় জ্যোতিষী মানে কি ? যা বলে তা সত্যি হয় ? আমার অতীত ও বৰ্ত্তমান বলতে পারে ? ভবিষ্যতের কথা বললে বিশাস হয় না। বন্ধু বলিল—চলই না । পকেটে টাকা আছে ? দু-টাকা নেবে, তোমার হাত দেখিও। দেখ না বলতে পারে কি না। কাছেই একটা গলির মধ্যে একতলা বাড়ীর গায়ে টিনের সাইনবোর্ডে লেখা আছে—তারানাথ জ্যোতির্বিবনোদ– এই স্থানে হাত দেখা ও কোষ্ঠীবিচার করা হয়। গ্রহশাস্তির কবচ তন্ত্রোক্ত মতে প্রস্তুত করি । আসুন ও দেখিয়া বিচার করুন। বড় বড় রাজা-মহারাজার প্রশংসাপত্র আছে । দর্শনী নামমাত্র । বন্ধু বলিল—এই বাড়ী । হাসিয়া বলিলাম—লোকটা বোগাস। এত রাজা-মহারাজা যার ভক্ত, তার এই বাড়ী ? বাহিরের দরজায় কড়া নাড়িতেই ভিতর হইতে একটি ছেলে বলিয়া উঠিল—কে । কিশোরী জিজ্ঞাসা করিল—জ্যোতিৰী-মশায় বাড়ী আছেন। ভিতর হইতে খানিকক্ষণ কোন উত্তর শোনা গেল না। তারপর দরজা খুলিয়া গেল । একটা ছোট ছেলে উকি মারিয়া আমাদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে খানিকক্ষণ চাহিয়া দেখিয়। জিজ্ঞাসা করিল—কোথা থেকে আসছেন ? আমাদের আসিবার উদ্দেশু শুনিয়া সে আবার বাড়ীর ভিতর চলিয়া গেল। কিছুক্ষণ কাহারও কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া গেল না । আমি বলিলাম—ব্যাপার যা দেখছি, তোমার জ্যোতিষী পাওনাদারের ভয়ে দিনরাত দরজা বন্ধ ক’রে রাখে। ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আমরা পাওনাদার কি না দেখতে।