পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖bሥ8 বিভূতি-রচনাবলী না করেছি, তা নয়। ও আতরের গন্ধ আর এমন একটা কি, এমন সব ভয়ানক ভয়ানক তান্ত্ৰিক দেখেছি, শুনলে পরে বিশ্বাস করবে না। একজনকে জানতুম সে বিষ খেয়ে হজম করত। কিছুদিন আগে কলকাতায় তোমরাও এ-ধরনের লোক দেখেছ। সালফিউরিক এসিড, নাইটিক এসিড় খেয়েও বেঁচে গেল, জিভে একটু দাগও লাগল না। এসব নিম্ন ধরনের আচর্চার শক্তি, ব্ল্যাকম্যাজিক ছাড়া কিছু নয়। এর চেয়েও অদ্ভুত শক্তির তান্ত্রিক দেখেছি। কি হ’ল জান ? ছেলেবেলায় আমাদের দেশ বাকুড়াতে এক নামকরা সাধু ছিলেন। আমার এক খুড়ীমা তার কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন, আমাদের ছেলেবেলায় আমাদের বাড়ী প্রায়ই আসতেন। তিনি আমাদের খুব ভালোবাসতেন, আমাদের বাড়ী এলেই আমাদের নিয়ে গল্প করতে বসতেন, আর আমাদের প্রায়ই বলতেন—দুই চোখের মাঝখানে ভুরুতে একটা জ্যোতি আছে, ভালো ক'রে চেয়ে দেখিস, দেখতে পাবি। খুব একমনে চেয়ে দেখিস । মাস দুই-তিন পরে আমার একদিন জ্যোতি দর্শন হ’ল । মনে ভাবলাম-চন্দ্রদর্শনের মতো নাকি ? মুখে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ধরনের জ্যোতি ? —ঠিক নীল বিদ্যুৎশিখার মতো। প্রথম একদিন দেখলাম সন্ধ্যার কিছু আগে-বাড়ীর পিছনে পেয়ারাতলায় বসে সাধুর কথামত নাকের উপর দিকে ঘণ্টাখানেক চেয়ে থাকতাম, —সব দিন ঘটে উঠত না, হথার মধ্যে দু-তিন দিন বসতাম। মাস-তিনেক পরে প্রথম জ্যোতি দর্শন হ’ল নীল, লিকুলিকে একটা শিখা, আমার কপালের মাঝখানে ঠিক সামনে খুব স্থির, মিনিটখানেক ছিল প্রথম দিন । এই ভাবে ছেলেবেলাতেই সাধুসন্ন্যাসী ও যোগ ইত্যাদি ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। বাড়ীতে আর মন টেকে না ঠাকুরমার বাক্স ভেঙে একদিন কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলাম একেবারে সোজা কাশীতে । একদিন অহল্যা বাঈয়ের ঘাটে বসে আছ, সন্ধ্যা তখন উত্তীর্ণ হয় নি, মন্দিরে মন্দিরে আরতি চলেছে, এমন সময় একজন লম্বা-চওড়া চেহারার সাধুকে খড়ম পারে দিয়ে কমণ্ডলু হাতে ঘাটের পৈঠায় নামতে দেখলাম। তার সারা দেহে এমন কিছু একটা ছিল, যা আমাকে আর অন্যদিকে চোখ ফেরাতে দিলে না, সাধু তে কতই দেখি । চুপ করে আছি, সাধুবাবাজী জল ভরে পৈঠা বেয়ে উঠতে উঠতে হঠাৎ আমার দিকে চেয়ে থাসা বাংলায় বললেন-বাবাজীর বাড়ী কোথায় ? আমি বললাম, বাকুড়া জেলায় মালিয়াড়-রুদ্রপুর। সাধু থমকে দাড়ালেন। বললেন-মালিয়াড়-রুদ্রপুর ? তারপর কি যেন একটা ভাবলেন, খুব অল্পক্ষণ, একটু যেন অষ্টমনস্ক হয়ে গেলেন। তারপর বললেন–রুদ্রপুরের রামরূপ সান্ন্যালের নাম শুনেছ ? তাদের বংশে এখন কে আছে জান ? আমাদের গ্রামে সায়্যালের এক সময়ে খুৰ অবস্থাপন্ন ছিল, খুব বড় বাড়ী-ঘর, দরজার হাতি বাধা থাকতো শুনেছি—কিন্তু এখন তাদের অবস্থা খুব খারাপ। কিন্তু রামরূপ সাল্ল্যালের নাম তো কখনও শুনি নি। সন্ন্যাসীকে সসন্ত্রমে সে কথা বলতে তিনি হেলে