পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سb bرف আমি ত অবাকৃ! ইতস্তত: করছি দেখে সে পাগলের মতে খিলখিল করে কি এক রকম অলম্বন্ধ হাসি হেসে বললে—থা—খা-ক্ষীরের বরফি থা— আমার মনে হ’ল এ তে দেখছি পুরো পাগল, কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই, এর কথায় মড়া পোড়ানো কয়লা মুখে দেব-ছিঃ ছিঃ–কিন্তু আমার তখন আর ফেরাবার পথ নেই, অনেক দূর এগিয়েছি। দিলাম সেই কয়লা মুখে পুরে, যা থাকে কপালে ! পরক্ষণেই খু খু করে সেই বিত্র, বিস্বাদ চিতার কয়লার টুকরো মুখ থেকে বার ক’রে ফেলে দিলুম। পাগলী আবার খিলখিল করে হেসে উঠল। রাগে দুঃখে আমার চোখে তখন জল এসেছে। কি বোকামি করেছি এখানে এসে– এ পাগলই, পাগল ছাড়া আর কিছু নয়, বদ্ধ উন্মাদ, পাডাগারের ভূতের সাধু বলে নাম রটিয়েচে । পাগলী হাসি থামিয়ে বিদ্রুপের মুরে বললে—খেলি রাবডি, মৰ্ত্তমান কলা ? পেটুকু কোথাকার। পেটের জন্তে এসেছে শ্মশানে আমার কাছে ? দূর হ জানোয়ার-দূর হ। আমার ভয়ানক রাগ হ'ল। অমন নিষ্ঠুর কথা আমায় কখনও কেউ মুখের ওপর বলে নি। একটিও কথা না ব'লে আমি তখনই সেখান থেকে উঠে চলে এলাম। বললে বিশ্বাস করবেন • না, আবার সেদিন শেষ রাত্রে পাগলীকে স্বপ্নে দেখলাম, আমার শিয়রের দিকে দাডিয়ে হাসি-হাসি মুখে বলছে—রাগ করি নে। আসিস আজ, রাগ করে না, ছি— এখনও পর্য্যন্ত আমার সন্দেহ হয় পাগলীকে স্বপ্নে দেখেছিলাম, না জাগ্রত অবস্থায় দখেছিলাম । যা হোক্ জেগে উঠে আমার রাগ আর রইল না। পাগলী আমায় যাদু করলে না কি ? গেলাম আবার দুপুরে। এবার কিন্তু তার মূৰ্ত্তি ভারী প্রসন্ন। বললে—আবার এসেছিল দেখছি। আচ্ছা নাছোডবান্দা তো তুই ? আমি বললাম—কেন বাদর নাচাচ্ছে আমায় নিয়ে ? দিনে অপমান ক’রে বিদেয় ক’রে আবার রাত্রে গিয়ে আসতে বল । এ রকম হয়রান ক'রে তোমার লাভ কি ? পাগলী বললে—পারবি তুই ? সাহস আছে ? ঠিক যা বলব তা করবি ? বললাম— আছে। যা বলবে তাই করব। দেখই না পরীক্ষা করে। সে একটা অদ্ভূত প্রস্তাব করলে। সে বললে—আজ রাত্রে আমায় তুই মেরে ফেল। গলা টিপে মেরে ফেল। তারপর আমার মৃতদেহের ওপর বসে তোকে সাধনা করতে হবে। নিয়ম বলে দেব। বাজার থেকে মদ কিনে নিয়ে আয়। আর দুটো চাল-ছোলা ভাজ। মাঝে মাঝে আমার মৃতদেহ ই ক’রে বিকট চিৎকার করে উঠবে যখন, তখন আমার মুখে এক ঢোক মদ আর দুটো চাল-ছোলা ভাজা দিবি । ভোর-রাত পৰ্য্যস্ত এমনি মড়র ওপর বসে মন্ত্রজপ করতে হবে । রাত্রে হয়ত অনেক রকম ভয় পাবি । যারা এসে ভয় দেখাবে তারা কেউ মানুষ নয়। কিন্তু তাদের ভয় ক’রো না । ভয় পেলে সাধনা তো মিথ্যা হবেই, প্রাণ পৰ্য্যন্ত হারাতে পার। কেমন রাজী ?