পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ বিভূতি-রচনাবলী গিয়েছে শেকডের মধ্যে । আমাকে বিশেষ বেগ পেতে হ’ল না, অল্প চেষ্টাতেই সেটা টেনে তুলে ফেললাম। পাগলী বললে—মডার ওপর বসে তোকে সাধনা করতে হবে-ভয় পাবি নে তো ? aয় পেয়েছ কি মরেছ। আমি হঠাৎ আশ্চৰ্য্য হয়ে চিৎকার করে উঠলাম। মডার মুখ তখন আমার নজরে পড়েছে। সেদিনকার সেই ষোড়শী বালিকা। অবিকল সেই মুখ, সেই চোখ, কোন তফাত নেই। পাগলী বললে—চেচিয়ে মরছিস্ কেন, ও আপদ ? অামাব মাথার মধ্যে কেমন গোলমাল হয়ে গিয়েছে তখন । পাগলীকে দেখে তখন আমার অত্যন্ত ভয় হ’ল । মনে ভাবলাম, এ অতি ভয়ানক লোক দেখছি। গায়ের লোকে ঠিকই বলে। কিন্তু ফিরবার পথ তখন আমার বন্ধ । পাগলী আমায় যা যা করতে বললে, সন্ধ্যে থেকে আমাকে তা করতে হ’ল । শবসাধনার অনুষ্ঠান সম্বন্ধে সব কথা তোমায় বলবারও নয়। সন্ধ্যের পর থেকেই আমি শবের ওপর আসন ক'রে বসলাম। পাগলী একটা অর্থশূন্ত মন্ত্র আমাকে বললে—সেটাই জপ করতে হবে অনবরত। আমার বিশ্বাস হয় নি যে, এতে কিছু হয়। এমন কি, ও যখন বললে—যদি কোন বিভীষিকা দেখ, তবে ভর পেয়ে না। ভয় পেলেই মরবে।—তখন আমার মনে বিশ্বাস হয় নি। রাত্রি দুপুর হ’ল ক্রমে। নির্জন শ্মশান, কেউ কোন দিকে নেই, নীরন্ধ অন্ধকারে দিগবিদিক লুকিয়েছে। পাগলী যে কোথায় গেল, তাও আমি আর দেখি নি। হঠাৎ এক পাল শেরাল ডেকে উঠল নদীর ধারে একটা কষাড ঝোপের আডালে। শেয়ালের ডাক তে কতই শুনি, কিন্তু সেই ভয়ানক শ্মশানে একটা টাটকা মডার ওপর বসে সেই শেয়ালের ডাকে আমার সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল। ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আর একটি ব্যাপার ঘটল । বিশ্বাস করা-না-করা তোমার ইচ্ছে—কিন্তু তোমার কাছে মিথ্যে বলে আমার কোন স্বার্থ নেই। আমি তারানাথ জ্যোতিষী, বুঝি কেবল পয়সা—তুমি আমাকে এক পয়সা দেবে না। সুতরাং তোমার কাছে মিথ্যে বলতে যাব কেন ? শেয়াল ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হ’ল শ্মশানের নিচে নদীজল থেকে দলে-দলে সব বেী-মানুষরা উঠে আসছে—অল্পবয়সী বেী, মুখে ঘোমটা টানা, জল থেকে উঠে এল অথচ কাপড ভিজে নয় কারে । দলে দলে—একট, দুটো, পাচট, দশটা, বিশটা ৷ তারা সকলে এসে আমায় ঘিরে দাডাল-আমি একমনে মন্ত্র জপ করছি। ভাবছি—যা হয় হবে । একটু পরে ভালো ক'রে চাইতে গিয়ে দেখি, আমার চারপাশে একটাও বেী নয়, সব করা পাখি, বীরভূমে নদীর চরে যথেষ্ট হয়। দু-পায়ে গভীর ভাবে ইটে ঠিক যেন মানুষের মতো ।